‘স্বীকৃতির উৎসব’
শারদোৎসব মানেই বাঙালির এক অন্য রকম আবেগ। আর বাঙালির এই চিরন্তন মহোৎসব দুর্গাপুজো ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’- এর হাত ধরেই আজ সর্বজনীন থেকে বিশ্বজনীন। ২০২১ সালে ইউনেস্কো (UNESCO) থেকে বাংলার দুর্গাপুজোর জন্য মিলেছে ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ’ স্বীকৃতি। এই ঘোষণার এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে কলকাতার ফোরাম ফর দুর্গোৎসব ১৫ ডিসেম্বর ২০২২-এ কলকাতার টাউন হলে এই স্বীকৃতির বর্ষপূর্তি উৎসবের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিভিন্ন ক্লাব এবং বিভিন্ন পুজো কমিটির শতাধিক সদস্য। সেই সঙ্গেই অনুষ্ঠানে এমন অনেক জনকে সম্মান জানানো হয়, যাঁদের অবদান ছাড়া কলকাতার এই দুর্গাপুজো প্রায় অসম্পূর্ণ বললেই চলে।
এ বছরও অন্যথা হয়নি। প্রথা মেনেই গত ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ কলকাতার ফোরাম ফর দুর্গোৎসব টাউন হলে স্বীকৃতির উৎসবের আয়োজন করেছিল। এই মিলন উৎসবে বিভিন্ন মহল থেকে গুণীজনদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গত বছরের মতো এ বারও ঐতিহ্য মেনে ফোরামের কর্মকর্তারা লাল-সাদা ধুতি পাঞ্জাবীতে সেজেছিলেন। এ বছরও এই ‘স্বীকৃতির উৎসব’-এর কেন্দ্রে ছিল ‘গুণীজন সম্বর্ধনা প্রদান’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ফোরামের কর্মকাণ্ডের একটি অডিও ভিস্যুয়াল প্রদর্শনের পরে সম্মাননা অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এ বছর যাঁদের সম্মান জানানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিল্পী অমর সরকার, মৃৎশিল্পী স্বর্গীয় গোপেশ্বর পাল, আলোক শিল্পী বাবু পাল, সংগঠক রবীন্দ্রনাথ দাঁ, বিচারক হীরক নন্দী এবং সাংবাদিক দেবদূত ঘোষ ঠাকুর। এ ছাড়াও এই ‘স্বীকৃতির উৎসব’-এ উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক জগতের প্রবাদ-প্রতিম ব্যক্তিত্বরা। ছিলেন কলকাতা পুরসভার সাংসদ ও চেয়ারম্যান মালা রায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁরাও কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন শিল্পী ভবতোষ সুতার, মৃৎশিল্পী পরিমল পাল-সহ আরও অনেকে।
এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “ফোরামের উদ্যোগে ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ’ স্বীকৃতি সম্মাননা প্রদানের আজ দু’বছর। কলকাতার দুর্গাপুজোয় যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য, তেমনই কয়েক জন গুণীজনকে আমরা সম্মান জানিয়েছি। এ ছাড়াও আমরা সারা বছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। রক্তদান থেকে শুরু করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার, দুঃস্থদের শীতবস্ত্র প্রদান ইত্যাদি। করোনা আবহেও পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’। বিগত বছরগুলির মতো আগামী বছরেও এই সমস্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এই সব কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’ ১৩ বছর অতিক্রান্ত করেছে। এই বছর ফোরামের বাড়তি পাওনা আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। কারণ আনন্দবাজার অনলাইন ছাড়া কলকাতার দুর্গাপূজো এই মাত্রায় পৌঁছতে পারত না।’’ সেই প্রসঙ্গে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর পক্ষ থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক দেবদূত ঘোষঠাকুর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “আনন্দবাজার অনলাইনের উদ্যোগেই কলকাতার দুর্গাপুজো আজ এত বড় রূপ নিয়েছে। পাঠকদের কাছে কলকাতার দুর্গাপুজোকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে আনন্দবাজার। পুজোর সঙ্গে এ ভাবে জড়িয়ে থাকা কেবলমাত্র নিজের আনন্দের জন্যে নয়। কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে বহু মানুষের আর্থিক দিকও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। আনন্দবাজার অনলাইনের হাত ধরেই কলকাতার বহু নামহীন পুজো আজ সম্মানিত হয়েছে।’’
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার অনলাইন।