(বাঁ দিক থেকে) অমিত শাহ, অনুপম হাজরা এবং জেপি নড্ডা। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরকারি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ বার ‘দলকে অস্বস্তিতে ফেলা’ প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করা হল। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সদর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নেতা অরুণ সিংহ মঙ্গলবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এক নাগাড়ে রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনা করা, তৃণমূলের মঞ্চে যাওয়া, সমাজমাধ্যমে দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো মন্তব্য করে চলছিলেন অনুপম। এটা যে রাজ্য নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখছেন না তা আগেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সেটা বুঝিয়ে দেন অনুপমকে।
সম্প্রতি সর্বভারতীয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অনুপমকে দেওয়া নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যা সরাসরি দেখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। দীর্ঘ দিন কেন্দ্রের ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’-র নিরাপত্তা পেতেন অনুপম। গত ৫ ডিসেম্বর অনুপমকে জানিয়ে সেই নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
তবে সেই বার্তার পরেও অনুপম যে দমছেন না সেটা বুঝিয়ে রবিবার ফের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। সেখানে লিখেছিলেন, ‘‘নিজের দলের মধ্যে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠিত চোর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাখলে, আর কয়েকদিন পর তৃণমূলকে চোর বলার জায়গায় থাকব কি আমরা?’’ ওই পোস্টের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দলীয় পদ থেকে সরানো হল তাঁকে।
এক সময়ে বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন অনুপম। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে গত লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর আসনে প্রার্থীও হন। তবে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। সেই সময়ে নানা ভাবে তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। বিজেপির অনেকেই বলেন, সেই কারণে রাজ্য থেকে সরিয়ে অনুপমকে কম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিহারের সংগঠন দেখতে বলা হয়।
ইদানীং একের পর এক মন্তব্যে রাজ্য বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে যাচ্ছিলেন অনুপম। বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কের সময়ে তিনি শান্তিনিকেতনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে চলে যান। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেন। তার আগে রামপুরহাট এবং পরে খয়রাশোলে দু’টি বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল অনুপমের। তার মাঝে তিনি ফেসবুক লাইভে রাজ্য নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করেন। অভিযোগ করেন, রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর মদতেই জেলা বিজেপিতে অরাজকতা চলছে। জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা লোক দিয়ে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনুপম। সেই সঙ্গে জেলারই এক নেতা তাঁর ‘জাত’ উল্লেখ করে আক্রমণ করেছে, এমন অভিযোগ তুলে এর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলেন অনুপম। এ প্রসঙ্গে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমার জাত তুলে কথা বলা হয়েছে। আমি তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত। সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করব।’’
দলকে অস্বস্তিতে ফেললেও অনুপমের যুক্তি ছিল ভালর জন্যই তিনি সব কিছু করছেন। বলেছিলেন, ‘‘দলের কোণঠাসা কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে চলেছি আমি। তবে যে কোনও কাজ করার ক্ষেত্রেই বাধা পাচ্ছি আমি। আমাকে রাজ্য বিজেপির তরফে কোনও কর্মসূচিতে ডাকা হয় না। কখনও ডাকা হলেও এমন সময়ে জানানো হয়, যাতে আমি সময়ে আসতে না পারি।’’ অনুপমের দাবি, রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েক জনের অঙ্গুলিহেলনেই এই সব হচ্ছে। সেই সময়েই রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উনি আগে বালুরঘাট সামলান। ক’দিন আগেই দেখলাম ২০ জন লোক নিয়ে ঘুরছেন। তার মধ্যে ১৮ জনই নিরাপত্তাকর্মী।’’ এর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘সবটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন। কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা এর ফল দেখতে পাবেন।’’ সেই ‘ফল’ এ বার পেলেন সাংগঠনিক ‘প্রত্যাঘাতে’।