গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দু’বছর আগে বিজেপি এবং যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভা ছেড়ে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী অনগ্রসর নেতা স্বামীপ্রসাদ মৌর্যের বিরুদ্ধে তার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। এ বার সরাসরি হিন্দু তথা সনতন ধর্মকে ‘ধোঁকা’ বলার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে।
সোমবার সকালে যন্তর মন্তরে ‘বহুজন সমাজ অধিকার সম্মেলনে’ স্বামীপ্রসাদ বলেন, ‘‘হিন্দু কোনও ধর্ম নয়, ধোঁকা।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, ‘হিন্দু বলে কোনও ধর্ম নেই। এটি একটি জীবনধারা’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন, ‘হিন্দুত্ব বলে কোনও ধর্ম নেই’। ওঁরা যখন এমন কথা বলেন, তখন কারও ভাবাবেগ আহত হয় না। স্বামীপ্রসাদ বললেই বিতর্ক হয়।’’
ওই মন্তব্যের পরে বিতর্ক তৈরি হলেও ‘পিছু হটেননি স্বামীপ্রসাদ’। বরং তাঁর দাবি, নব্বইয়ের দশকে সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, হিন্দু কোনও ধর্ম নয়। আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। তার আগে সমাজবাদী পার্টির প্রথম সারির নেতার মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ঘটনাচক্রে, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে অখিলেশ উত্তরপ্রদেশে অনগ্রসর এবং সংখ্যালঘু ভোটের পাশাপাশি উচ্চবর্ণের সমর্থন পেতে সক্রিয় হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে রাজ্য জুড়ে ব্রাহ্মণ সম্মেলনেও যোগ দিচ্ছেন তিনি। সেখানে স্বামীপ্রসাদের বিরুদ্ধে ‘হিন্দুত্ব বিরোধী’ মন্তব্য নিয়ে অভিযোগ শুনতে হয়েছে তাঁকে।
সোমবার কনৌজে ‘প্রবুদ্ধ সমাজ’ এবং ‘মহা ব্রাহ্মণ সমাজ’-এর সভায় অখিলেশ কারও নাম না করে বলেন, ‘‘আমরা কোনও ধর্ম বা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনও রকম মন্তব্য সমর্থন করি না।’’ প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে স্বামীপ্রসাদ বলেছিলেন, ‘‘রামচরিতমানস’ নিজের আনন্দ এবং প্রশংসা পাওয়ার জন্য লিখেছিলেন তুলসীদাস। সব ধর্মকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু সেখানে (রামচরিতমানস) ধর্মের নামে দলিত, আদিবাসী এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে গালি দেওয়া হয়েছে কেন? জাতির কথা বলে, শূদ্র বলে কেন গালি দেওয়া হয়েছে? গালি দেওয়াটা কি ধর্ম?’’ সে সময়ও তাঁর ওই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক হয়েছিল।
একদা মায়াবতী-ঘনিষ্ঠ স্বামীপ্রসাদ দু’দফায় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের পড্রৌনা থেকে টানা তিন বার বিধানসভা ভোটে জিতেছেন তিনি। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে তিনি বিএসপি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে জিতে যোগী সরকারের শ্রম এবং জনকল্যাণ মন্ত্রী হন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে স্বামীপ্রসাদের মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা বদায়ুঁ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। এখনও তিনি বিজেপির সাংসদ। সোমবার বাবার মন্তব্যের নিন্দাও করেন সঙ্ঘমিত্রা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অখিলেশের দলে যোগ দিয়েছিলেন স্বামীপ্রসাদ। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে কুশীনগর জেলার ফাজ়িলনগর আসনে লড়ে বিজেপির কাছে হেরে যান।