মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। সেখান থেকে বেরোনোর সময় শিক্ষায় দুর্নীতিকাণ্ডে নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেন পার্থ। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই আমার মুক্তি। অবিলম্বে জেল থেকে বেরোতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ আবেদন করব। নির্দোষ প্রমাণিত করতে গেলে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার আমি সেটা চাই। আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ।’’
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত বছরের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২৩ জুলাই মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়। অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। তার পর তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই পার্থের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বর্তমানে পার্থের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। ইডির পর সিবিআইয়ের হাতেও গ্রেফতার হন পার্থ।
গ্রেফতারির পর পার্থের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল তাঁর দল তৃণমূল। দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে পার্থকে। মন্ত্রিসভা থেকেও সরানো হয়েছে তাঁকে। তার পরও কখনওই দলের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি পার্থ। বরং দল তাঁর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি করলেও পার্থ বার বার বলেছেন, ‘‘তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।’’ সোমবারও সেই একই সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিবের গলায়। পার্থের গ্রেফতারির পর তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘বিচারে আইন যা রায় দেবে, আমাদের দল মেনে নেবে। বিচারে যত চরমই শাস্তি হোক, আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করব না। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড!’’ এই প্রসঙ্গে সেই সময় পার্থ বলেছিলেন ‘‘ঠিকই বলেছেন।’’ তবে বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে মুখ্যমন্ত্রীরই হস্তক্ষেপ চাইলেন পার্থ।
সোমবার আবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন পার্থ। বলেছেন, ‘‘আমি নিয়োগকর্তা নই, সুপারিশকর্তা নই। কোনও ব্যাপারের সঙ্গে ছিলাম না। কে কী বলছে, জানার দরকার নেই, অনেকে অনেক কথা বলে। অনেক কথা বলেই আমরা এক থেকে ক্ষমতায় এসেছি।’’
গ্রেফতারির এক বছরের মাথায় সোমবার আদালতে ঢোকার সময়ও বন্দিদশা থেকে মুক্তির কথা বলেছিলেন পার্থ। বলেছিলেন, ‘‘এক বছর বিনা বিচারে আছি। আমায় জোর করে আটকে রাখা হয়েছে।’’ বন্দিমুক্তি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘‘এক বছর বিনা বিচারে আছি। বন্দিমুক্তি আন্দোলনকারীদের জিজ্ঞাসা করবেন। তাঁরা মুখ খুলছেন না।’’
এই দুর্নীতিতে জড়িত অনেকেই জেলের বাইরে রয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করেছেন পার্থ। তবে কারও নাম বলতে চাননি। অর্পিতার বাড়ি থেকে যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তা তাঁর নয় বলেও আবার দাবি করেছেন পার্থ। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন পার্থ। বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়া ভারত, ভারত ইন্ডিয়া। বাংলার মানুষের যেখানে সুবিধা, সেখানেই তৃণমূল।’’