বিমল গুরুং। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
তিন বছরের অজ্ঞাতবাস থেকে প্রকাশ্যে এসে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে রাজনৈতিক ভোলবদল করলেন ‘গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা’-র প্রাক্তন সভাপতি বিমল গুরুং। বিজেপি তথা এনডিএ-র সঙ্গ ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা ঘোষণা করলেন পাহাড় থেকে ‘বহিষ্কৃত’ এই নেতা।
মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই গুরুং ঘোষণা করেন, সল্টলেকের গোর্খাভবনে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তিনি সেখানে পৌঁছেও যান। কিন্তু দেখা যায় গোর্খাভবনের তালা ভিতর থেকে বন্ধ। স্থানীয় থানার পুলিশ ডাকাডাকি করেও গুরুং দেখা পাননি গোর্খাভবনের কর্মীদের। এর পরেই গোর্খাভবন চত্বর ছাড়েন তিনি। পরে সন্ধ্যায় ধর্মতলা এলাকার একটি হোটেলে পাশে রোশন গিরিকে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করেন গুরুং। জানান, বিগত ছ’বছর তাঁর দল বিজেপি-র জোটসঙ্গী। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের ‘গোর্খাল্যান্ড’-র দাবি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। কথা দিয়েও কথা রাখেনি।
এরপরেই তিনি শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্তুতি। গুরুং বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমেবাদ্বিতীয়ম। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখলাম, যা বলেন সে কথা রাখেন।” এক নিঃশ্বাসে গুরুং বলেন, ‘‘২০২১ সালে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই।” প্রসঙ্গত, গুরুংয়ের আগে এতটা সরাসরি মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন জঙ্গলমহল আন্দোলনের সময় নিহত মাওবাদী পলিটব্যুরো নেতা কিষেনজি।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অধীর, অন্তত ১৫০ আসনে প্রার্থী: জোটের সলতে পাকাচ্ছে কং
গুরুং জানান, তিনি গোর্খাল্যান্ডের দাবি ছাড়বেন না। তবে তিনি গোর্খাল্যান্ড দাবির রাজনৈতিক সমাধান চান। তাই তিনি আগামী বিধানসভা ভোটে মমতা তথা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে চান।
আরও পড়ুন: আচমকা প্রকাশ্যে গুরুঙ্গ, হাজির গোর্খা ভবনে, তবে ঢুকতে পারলেন না
এ দিন গুরুংয়ের গোর্খাভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ঘোষণা করার মধ্যেই পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত ছিল। কারণ, এখনও রাজ্য পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ গুরুং। তার পরেও খাস কলকাতায় তাঁর এ ভাবে প্রকাশ্যে আগমন পরিবর্তিত সমীকরণের ইঙ্গিতই জোরাল করেছে। সন্ধ্যায় সেই ইঙ্গিত স্পষ্টতর হয় গুরুংয়ের সাংবাদিক সম্মেলনের পর। পাহাড়ের রাজনীতি সম্পর্কে অবহিতদের বিশ্লেষণ, গুরুংয়ের রাজনৈতিক অবস্থান বদলের খবর ছিল বর্তমান জিটিএ প্রধান বিনয় তামাংয়ের কাছে। তাই তালাবন্ধ থেকেছে গোর্খাভবন। তবে গুরুংযের ঘোষণার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনয়ের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কথায়, ‘‘পাহাড়ে বিজেপি নতুন জোটসঙ্গীর হদিশ পেয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাকে সামনে রেখে দার্জিলিং-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে নতুন রাজনৈতিক অক্ষ তৈরি করার চেষ্টা করছে বিজেপি।” তবে গুরুংয়ের এ দিনের ঘোষণার পর বিনয় তামাং-অনিত থাপারা কোনদিকে যাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।