Tiger

সুন্দরবনের গ্রামে বাঘ ঠেকাতে ১০০ দিনের কাজ হাতিয়ার বন দফতরের

গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়লে বনকর্মীরা পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে গড়া হয়েছে ৭টি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:০৭
Share:

ম্যানগ্রোভের পাশাপাশি নজরদারি চলছে দক্ষিণরায়ের গতিবিধির উপরেও— নিজস্ব চিত্র।

১০০ দিনের কাজের কর্মসূচি (‘মনরেগা’)-তে ভর করেই ‘বাঘবন্দির খেলা’য় বাজিমাত করতে চাইছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগ। আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে বাদাবন সৃজন কর্মসূচিতে যুক্ত ‘মনরেগা’ শ্রমিকদের ম্যানগ্রোভের চারার উপর নজরদারির পাশাপাশি বাঘের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ বলছে, সেই পরিকল্পনায় সাফল্যও মিলেছে।

Advertisement

আমপান পরবর্তী সময়ে সুন্দরবনের কুলতলি এলাকার গ্রামে বাঘের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নভেম্বরের শেষ পর্ব থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জব কার্ডধারীদের কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিনব পদ্ধতি নিয়েছে বনবিভাগ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) মিলন মণ্ডল জানিয়েছেন, আমপানের পরে রাজ্য সরকারের বনসৃজন প্রকল্পে লাগানো ম্যানগ্রোভের চারার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নজরদারির কাজে যুক্ত করা হয়েছে জঙ্গলের উপর নিভর্রশীল এবং বাদাবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ গ্রামবাসীদের। তিনটি দলে ভাগ হয়ে নৌকায় চড়ে বাদাবনের দেখভালের পাশাপাশি তাঁরা গ্রামের আশপাশের নদী-খাঁড়িতে বাঘের উপস্থিতির উপর নজর রাখছেন দিনরাত। তিনি জানান, কুলতুলির ভুবনেশ্বরী, দেবীপুর এবং দেউলবাড়ি এলাকার মনরেগা প্রকল্পের কর্মীদের নিয়ে তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে একটি করে নৌকা রয়েছে।

রায়দিঘি রেঞ্জের অন্তর্গত কুলতলি এলাকার একাধিক গ্রামের ৫০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে বাঘের বসত। মাঝখানে ব্যবধান সরু নদীর। ক’বছর আগেও সেখানে বাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটত অহরহ। সমস্যা মেটাতে গ্রামগুলির উল্টোপাড়ের জঙ্গল বরাবর বন দফতরের উদ্যোগে নাইলনের জাল বসানো হয়েছিল। কিন্তু আমপানের জেরে সেই জালের বেড়া ভেঙে পড়তেই ঘটে বিপত্তি। ডিএফও বলেন, ‘‘আমাদের বিভাগে বসতি লাগোয়া জঙ্গল জুড়ে ৪১ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় জাল বসানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমপানে তার ৬০ শতাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে আমরা নতুন জাল বসানোর কাজ অনেকটাই করে ফেলেছি।’’

Advertisement

আমপানে নষ্ট হওয়া বাঘ-ঠেকানোর জাল বসছে নতুন করে— নিজস্ব চিত্র।

এ ছাড়া, গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়লে বনকর্মীরা পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে গড়া হয়েছে ৭টি ‘কুইক রেসপন্স টিম’। কিশোরীমোহনপুর, বিনোদপুর, নগেনাবাদ, ভুবনেশ্বরী, দেবীপুর, দেউলবাড়ি এবং অম্বিকানগরের স্বেচ্ছাসেবী যুবকদের নিয়ে গড়া হয়েছে এই টিমগুলি। তাদের বাঁশের খুঁটি, জালও দেওয়া হয়েছে বনবিভাগের তরফে।

আরও পড়ুন: ১০ হাজার কোটি পাবে না ভারত, আন্তর্জাতিক আদালতে জয়ী কেয়ার্ন

দক্ষিণ ২৪ পরগনার এডিএফও অনুরাগ চৌধুরী বলেন, ‘‘জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী সময়ে নদীতে স্রোত কম থাকে, সাধারণত সেই সময়ই বাঘ নদী পেরিয়ে গ্রামে ঢোকে।’’ তিনি জানান ২০১৭-’১৯ কুলতলির গ্রামে বাঘ ঢোকার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আমপান পরবর্তী পর্যায়ে চার বার এমন ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিনোদপুরে খাঁচা পেতে একটি বাঘকে ধরে জঙ্গলে ছেড়ে এসেছেন তাঁরা। বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অনেক সময় জ্বালানি সংগ্রহে গোপনে জঙ্গলে ঢোকার সময় গ্রামবাসীদের একাংশ জালের কিছু অংশ কেটে দেন। যা পরবর্তী কালে বাঘের বাইরে আসার ‘পথ’ তৈরি করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে ‘ফেন্সিং প্যাটার্ন’ কিছুটা বদলানোর কাজও শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: ম্যানগ্রোভ রোপণে উদ্যোগী প্রশাসন

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement