প্রতীকী ছবি।
সাড়ে চার বছর আগে এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশের কর্মী গৌতম ঘোষের। নেপাল সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, তুষারঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে গৌতম ও অভিযাত্রী দলের আরও দুই সদস্যের। সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হলেও গৌতমের মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মানতে রাজি নয় পরিবার। ‘মৃত্যু-রহস্যের’ কিনারা চেয়ে কখনও রাজ্যপাল, কখনও কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছিলেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা গৌতমের স্ত্রী চন্দনা ঘোষ এবং দাদা দেবাশিস। গত সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন চন্দনা। তাতে দাবি করা হয়েছে, কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে নেপালের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ভারত সরকার। চন্দনার দাবি মতো গৌতমের মৃত্যুর ‘পুনর্তদন্ত’ চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে নেপাল সরকারকে। চিঠি পেয়ে আশার আলো দেখছেন গৌতমের পরিজনেরা।
২০১৬-র মে মাসে গৌতম-সহ রাজ্যের চার অভিযাত্রী এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিলেন। ২১ মে গৌতমের পরিবার খবর পায়, তুষারঝড়ের কবলে পড়েছে ওই দলটি। গৌতম-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক মহিলা অভিযাত্রীকে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গৌতমের দেহ উদ্ধার করা হয়। পরের বছরের ২ জুন তাঁর দেহ ব্যারাকপুরের বাড়িতে আসে।
দেবাশিস জানান, এভারেস্টের খুব কাছেই মিলেছিল তাঁর ভাইয়ের দেহ। নেপাল সরকার জানিয়েছিল, তুষারঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। দেবাশিস বলেন, ‘‘বেশ কিছু পারিপার্শ্বিক ঘটনা বিচার করে আমাদের সন্দেহ, ভাইয়ের মৃত্যুর পিছনে রহস্য রয়েছে। তাই মানসিক শান্তি লাভের জন্য আমাদের জানা প্রয়োজন, ওর সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল।’’
কেন এমন সন্দেহ?
দেবাশিসের দাবি, ‘‘প্রথমত, যে সংস্থার পরিচালনায় ভাইয়েরা অভিযানে গিয়েছিল, তারা বরাবরই অভিযান সম্পর্কে উদাসীন ছিল। যে তাঁবু ওদের দেওয়া হয়েছিল, তা খুবই নিম্ন মানের এবং তুষারপাতের অভিঘাত সামলাতে অক্ষম। দ্বিতীয়ত, চুক্তি থাকলেও গৌতমকে দু’টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়নি। অথচ অগ্রিম টাকা নেওয়া হয়েছিল। তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত ‘মাউন্টেনিয়ারিং রোপ’-ও দেওয়া হয়নি ভাইদের দলকে।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘ওই সংস্থা জানিয়েছিল, অভিযাত্রী দলের সঙ্গে থাকা শেরপা অভিযানের পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। তিনি নিখোঁজ। যদিও জানা গিয়েছে, তা সত্যি নয়। এই তথ্য গোপনের কারণ কী?’’
দেবাশিস আরও দাবি করেন, ‘‘অভিযানে যাওয়ার আগে হাওড়ার এক জনের থেকে গৌতম একটি ‘ক্যামেরা চিপ’ নিয়েছিল। মৃত্যুর পরে সেটি উদ্ধার হয়। জানতে পারি, সেই ‘চিপ’ থেকে দু’টি ছবি মুছে দেওয়া হয়েছে। এর কারণ স্পষ্ট নয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও মৃত্যুর কারণ ‘অজানা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।’’
এই সব কথার উল্লেখ করে রাজ্যপাল, কলকাতা পুলিশ, রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন চন্দনা।
চলতি সপ্তাহে তাঁরা রাজভবনের এক আধিকারিকের সঙ্গে দেখাও করেন।
দেবাশিস বলেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন চন্দনা। সোমবার আমরা বিদেশ মন্ত্রক থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তাতে লেখা রয়েছে, গত ১৮ জানুয়ারি কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাস চিঠি দিয়েছে নেপালের বিদেশমন্ত্রককে। তাতে গৌতমের মৃত্যুর পুনর্তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে। আমাকে এ-ও জানানো হয়েছে, এর আগেও কয়েক বার নেপালের বিদেশ মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়ে একই অনুরোধ করা হয়েছিল।’’
দেবাশিস জানান, তিনি একাধিক বার কাঠমান্ডু গিয়ে নেপালের বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর পুনর্তদন্ত দাবি করেছেন। কিন্তু এখনও কোনও সন্তোষজনক উত্তর পাননি।