ছবি: পিটিআই।
উৎসবের সময় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের তরফে এত দিন সাধারণ মানুষের সচেতনতার উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছিল। এ বার তাতে প্রশাসনকেও সক্রিয় ভাবে শামিল হওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি যে-সব নির্দেশ দিয়েছেন, তার মোদ্দা কথা দু’টি। প্রথমত, প্রত্যেককে মাস্ক পরতে বাধ্য করাতে হবে প্রশাসনকেই। দ্বিতীয়ত, পুজোর সময় সহযোগিতা চেয়ে কেউ যাতে বঞ্চিত না-হন, প্রশাসনকেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
পুজো যত এগিয়ে আসছে, চিন্তা বেড়ে চলেছে সরকারের। সেই জন্যই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে আমজনতার সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনকেও শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার বার্তা দিল নবান্ন। এ দিন পুলিশ, সাধারণ প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন সরকারের শীর্ষ কর্তারা। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে প্রত্যেকের করণীয় স্থির করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুজোয় ছাড়পত্র দেওয়ার পর থেকে মানুষের নিজের সচেতনতার উপরে জোর দিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিডের সুরক্ষা বিধি পালন করে উৎসবের আনন্দ নিতে বার বার আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু পুজোর মরসুম শুরু হওয়ার পর থেকে দোকানপাট, হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে যে-ভাবে মানুষের ঢল নামছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। অনেকে মাস্ক না-পরায় আতঙ্কও বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ‘রায় কার্যকর করার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের’
এই অবস্থায় সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মাস্কবিহীন দর্শককে কোনও ভাবেই প্রকাশ্যে ঘুরতে দেওয়া যাবে না। কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার না-করেও কঠোর ভাবে এই বিধি প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু দর্শকের তুলনায় পুলিশ কম। সাধারণ আইনশৃঙ্খলা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজ করে করোনা বিধি পালনের উপরে নজরদারি চালানো পুলিশের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। তাই স্থির হয়েছে, কোভিড-যোদ্ধা, সিভিক ভলান্টিয়ার, গ্রিন পুলিশকর্মীদেরও এই কাজে লাগানো হবে।
আরও পড়ুন: পুজো প্যান্ডেলে দর্শক নয়, স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের বৈঠকে জানান, রাজ্য পুলিশ ১০ লক্ষ, কলকাতা পুলিশ এবং কলকাতা পুরসভা পাঁচ লক্ষ করে মাস্ক বিতরণ করবে। এ ছাড়া সরকারের নির্ধারিত পুজো-বিধি পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরের অফিসারদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে নবান্ন। প্রতিটি মণ্ডপে চোখে পড়ার মতো কোভিড-সচেতনতা প্রচার করা হচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে।
আরও পড়ুন: ‘রায় কার্যকর করার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের’
পুজোয় কোভিড মোকাবিলার প্রস্তুতির ব্যাপারেও এ দিনের বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা করেন প্রশাসনিক কর্তারা। সব জেলা প্রশাসনের উদ্দেশে নবান্নের নির্দেশ, সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সংক্রান্ত সহযোগিতা চাইলে প্রশাসনকে তৎক্ষণাৎ তার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে শয্যা পেতে যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সের জোগান স্বাভাবিক রাখতে হবে প্রশাসনকেই। উৎসবের সুযোগে অসাধু উপায়ে কেউ অন্যায্য দর হাঁকলে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ভিড় সামলে দেব, কিন্তু অঞ্জলি!’
সেই সঙ্গে নবান্নের তরফে জেলা-কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। এই সময় দরকার হলে কোভিড পরীক্ষা বাড়ানোরও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ‘‘কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই সম্ভাব্য সমস্ত দিক থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রস্তুতি চালিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে কেউ সাহায্য চেয়েও পাবেন না, এটা চলবে না,’’ বলেন প্রশাসনের এক কর্তা।