বুধবার থেকে কলকাতা-অযোধ্যা দৈনিক বিমান পরিষেবা চালু হয়ে গেল। আপাতদৃষ্টিতে এই নয়া বিমান পরিষেবায় খুব বেশি চমক নেই। কারণ, দেশের আরও অন্য কয়েকটি শহরের সঙ্গেও অযোধ্যার সরাসরি বিমান সংযোগ চালু হয়েছে। আবার এর মধ্যে চমক রয়েছেও বটে। সে চমকের নাম ‘রাজনীতি’।
রাজনীতির কারবারিদের মতে, উত্তর ভারতের পাশাপাশি লোকসভা ভোটের আগে বাংলাতেও ‘মন্দির-হাওয়া’ তুলতে চায় বিজেপি। তাই, দেশের আরও পাঁচটি শহর থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হলেও কেবলমাত্র কলকাতার বিমানেরই প্রথম বোর্ডিং পাসটি তুলে দেওয়া হল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হাতে। সেই আদিত্যনাথ, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে যাঁর হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। কলাকাত-অযৌধ্যা উড়ানের বোর্ডিং পাস হাতে যোগীর ওই ‘প্রতীকী’ ছবি সর্ব অর্থেই ‘প্রতীকী’।
অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার বাকি আর পাঁচ দিন। আগে বাংলার সঙ্গে অযোধ্যার যোগাযোগ ছিল মাত্র দু’টি ট্রেন— দুন এক্সপ্রেস এবং জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস। তাতে সময় লাগত কম বেশি দেড় দিন। কিন্তু বিমান পরিষেবা চালু হওয়ায় কলকাতা থেকে অযোধ্যা পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। বুধবার সেই উড়ানেরই প্রথম বোর্ডিং পাস হাতে তুলে দেওয়া হয় আদিত্যনাথের হাতে।
ঘটনাচক্রে, অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে দেশ জুড়ে যে উন্মাদনা তৈরি করতে চাইছে বিজেপি, তার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে রয়েছে মমতার শাসনাধীন পশ্চিমবঙ্গ। প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানকে ‘ভোটের আগে গিমিক’ বলে অভিহিত করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা আগামী ২২ জানুয়ারি পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। হাজরা মোড় থেকে মিছিল করে সে দিন মমতা যাবেন পার্ক সার্কাস ময়দানে। শুধু কলকাতা নয়, তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশ, ওই দিন সব জেলায়, সব ব্লকে সংহতি মিছিল করতে হবে। ইতিমধ্যেই সঙ্ঘ পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বিভিন্ন সংগঠন রামমন্দির উদ্বোধনের কর্মসূচিতে নানা আয়োজন করেছে। তৃণমূলের বক্তব্য, গেরুয়া শিবির বিভাজনের উদ্দেশে রাস্তায় নামতে চেষ্টা করবে। তৃণমূল পাল্টা মিছিল করবে সংহতির বার্তা নিয়ে।
বিগত ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট যে, উত্তর ভারতে বিজেপি নিজেকে কার্যত নিরঙ্কুশ প্রমাণ করতে পেরেছে। বিন্ধ্য পর্বতের ও পারে তারা কখনওই তেমন জোরালো ছিল না। এখনও নেই। কিন্তু পূর্ব ভারতে তাদের ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ রুখে দিয়েছেন মমতা। লোকসভার আসনের বিচারে বাংলা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য। তাই আসন্ন লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় ৩৫টি আসন জেতার লক্ষ্য স্থির করেছেন। তাই বাংলায় ‘রামমন্দিরের হাওয়া’ তুলতে চাইছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে অযোধ্যায় সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হচ্ছে। বুধবার অযোধ্যা থেকে যথাক্রমে কলকাতা এবং বেঙ্গালুরুর সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হয়। দিল্লি থেকে সবুজ ঝান্ডা নেড়ে বেঙ্গালুরু-অযোধ্যা বিমানের সূচনা করেন অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা হিন্দুত্বের ‘পোস্টারবয়’ আদিত্যনাথের হাতে শোভা পেয়েছে শুধু কলকাতা-অযোধ্যা উড়ানের বোর্ডিং পাস। যেখানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ হাসিমুখে বাঙালি তীর্থযাত্রীদের আহ্বান জানাচ্ছেন রামনগরী অযোধ্যায়।