বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।
সমবয়সী পাঁচ জনের নানা জটিলতায় ভরা রোজকার জীবন। তাদের মধ্যে যোগসূত্র লিট্ল ম্যাগাজিন। একঘেয়েমি থেকে একটু মুক্তির বাতাস নিতে উইকএন্ডে তারা পাড়ি দেয় জঙ্গলমহলের দিকে। সেখানে গিয়েই ঊষর জমিতে ফলনের প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োজিত এক বৃদ্ধ কৃষিবিজ্ঞানীর সংস্পর্শে আসে তারা। আলাপ হয় আরও কিছু মানুষের সঙ্গে, যাদের জীবনে লড়াই আছে কিন্তু হতাশা নেই। এখান থেকেই খুলে যায় ভাবনা এবং অনুভবের নতুন জানলা।
এমন সাধারণ কিছু মানুষের সহজ কাহিনিকে ধরেই নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ স্মরণে সেলুলয়েডে পা দিল পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ। সংগঠনের কাজের ধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণ এই প্রথম। নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষে মিটিং-মিছিল বা সেমিনারের চেনা ছকের বাইরে এই উদ্যোগ একেবারেই অন্য রকম। মোট ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের ছবি জুড়ে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম নেই, স্লোগানও নেই। কিন্তু আদর্শের জন্য লড়াই আছে, মাওবাদীদের হত্যার রাজনীতির প্রসঙ্গ আছে, দখলদারির অনুষঙ্গ আছে। একেবারে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটেই আধুনিক প্রজন্মের পাঁচ চরিত্র অনুভব করে নভেম্বর বিপ্লবের বার্তা, সেখান থেকে পাওয়া অধিকারের জোর।
ছবির নাম ‘উইকএন্ড এ সূর্যোদয়’। লেখক শিল্পী সঙ্ঘের প্রয়োজনায় শুভ দাশুগুপ্তের কাহিনি অবিলম্বনে ছবি পরিচালনা করেছে ‘অযান্ত্রিক’ নামে চার জনের টিম। সঙ্গীত পরিচালনায় কল্যাণ সেন বরাট। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন সেন, দেবদূত ঘোষ, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়েরা নামমাত্র পারিশ্রমিকে অভিনয় করেছেন, গান গেয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র, রূপঙ্কর বাগচি, ইমন চক্রবর্তীরা। এই ছবিতেই প্রথম লোপামুদ্রার কণ্ঠে শোনা যাবে হিন্দি গান। ছবির নির্বাহী পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শ্রমিকের ৮ ঘণ্টা কাজ বা নারী-পুরুষের সমানাধিকারের ডিক্রিতে প্রথম সই করেছিলেন লেনিন। নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য আজও কী ভাবে আছে, অনালোচিত কিছু বিষয়ে আলো ফেলে সমসাময়িক জীবনের অভিজ্ঞতায় সেটাই আমরা ধরতে চেয়েছি।’’
ছবি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর। সরকারি প্রেক্ষাগৃহ আপাতত সংস্কারের জন্য বন্ধ। সীমিত তহবিলের দৌলতে এই ছবির একটি করে শো আপাতত চলবে কলকাতার দু’টি, শহরতলির একটি এবং কল্যাণীর একটি হলে। রাজ্যের বাম নেতাদের দেখার সুযোগ করে দিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিএম দফতরের তিন তলায় এক প্রস্ত ছোটখাটো প্রিমিয়ার স্ক্রিনিং হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সিপিএমের সব চেয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষটি সেখানে ছিলেন না! চোখের তরল শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় জর্জরিত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য ছবির খবর রেখেছেন।