নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনোর আগে মোট ১৮ জায়গায় দাঁড়াবে বন্দে ভারত। —ফাইল চিত্র।
একটি নয়। নয় নয় করে ১৮টি স্টপেজ! প্রথম দিনের ‘গতিশীল’ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের এমনই পরিস্থিতি। অবস্থা দেখে অনেকে বলছেন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নয়, এ হল ‘বন্দে বনগাঁ লোকাল’!
একটা সময় পর্যন্ত জানা গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী যাত্রার সূচনা করার পর হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার পথে শুধুই মালদহ স্টেশনে দাঁড়াবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। বৃহস্পতিবার রেলের পক্ষে জানানো হয় আরও দু’টি স্টেশন যুক্ত হচ্ছে। সেই মর্মে রেল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি’ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ‘চূড়ান্ত পরিবর্তিত সূচি’ প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় বোলপুর (শান্তিনিকেতন), মালদহ টাউন এবং বারসোই স্টেশনে দাঁড়াবে এই সেমি হাইস্পিড ট্রেন। কিন্তু উদ্বোধনের নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনোর আগে মোট ১৮ জায়গায় দাঁড়াবে বন্দে ভারত। এর মধ্যে ১৬টি ‘রাজনৈতিক’ স্টপেজ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এমনটা যে হতে পারে, তা বুধবারেই জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বিজেপির সাংসদ, বিধায়করা নিজের নিজের এলাকায় দ্রুতগতির ট্রেন চালুর ‘গর্ব’ প্রকাশের জন্য বন্দে ভারতকে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। তাতে রেল সাড়া দেবে কি না, তা অবশ্য তখনও জানা যায়নি। তবে এখন তালিকা চূড়ান্ত। বৃহস্পতিবার বিজেপি সূত্রে যে তালিকা পাওয়া গিয়েছে, তাতে হাওড়া থেকে ছেড়েই ট্রেন দাঁড়াবে ডানকুনিতে। এর পরে কামারকুণ্ডু, মসাগ্রাম, বর্ধমান, খানা হয়ে ঘোষিত স্টেশন বোলপুর। তার পরে আহমেদপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, চাতরা, নিউ ফরাক্কা হয়ে পূর্বঘোষিত মালদা টাউনে। এর পরে আবার মুকুরিয়ায় থেমে বারসোই। আবার কিষাণগঞ্জ ও আলুয়াবাড়ি রোডে থেমে তবে নিউ জলপাইগুড়ি।
সাধারণ ভাবে দ্রুতগামী বা অতি দ্রুতগামী ট্রেনের স্টপেজের সংখ্যা একটির বেশি থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে স্টপেজ সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি আসতেই থাকে। সরকারের পক্ষেও সেই দাবি না-মানা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন কলকাতা থেকে দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার সময় স্টপেজের সংখ্যা ছিল একটি। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার আগ্রহ এবং দাবিতে ক্রমাগত স্টপেজের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে রাজধানীর সফরের সময় ক্রমশ প্রলম্বিত হতে থাকে। এখন সেই কারণেই রাজধানীর সেই ‘গতিকৌলীন্য’ আর নেই। তার জায়গা নিয়েছে শতাব্দী বা দুরন্ত এক্সপ্রেস। তবে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তোলার তাগিদে সেগুলিরও অবস্থাও ভবিষ্যতে একই হতে পারে।
বন্দে ভারতের ক্ষেত্রে যাত্রা শুরুর আগেই সেই আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। বোলপুর (শান্তিনিকেতন) রেলের মানচিত্রে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন নয়। বোলপুর নামের পাশে বন্ধনীতে শান্তিনিকেতনের উল্লেখ রাখা হয়েছে দেখেই তা বোধগম্য। কিন্তু যে হেতু শান্তিনিকেতনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম জড়িয়ে, তাই রেলকে এই স্টেশনকে গুরুত্ব দিতে হয়েছে। যাতে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে কোনও বিভ্রান্তি তৈরি না হয়। রেলের কাছে বন্দে ভারতকে সেই বোলপুরে দাঁড় করানোর দাবি জানানো হল কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির তরফে (বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সেই আবেদন জানিয়ে রেলমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন)। দেখা গেল রেল সেই দাবিতে গুরুত্বও দিতে হল।
রেলের ঘোষিত যে সময়সূচি তাতে বন্দে ভারতের ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনোর কথা দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে। অর্থাৎ, মোট সময় লাগার কথা সাড়ে সাত ঘণ্টা। কিন্তু প্রথম দিন লাগবে ১০ ঘণ্টা ১০ মিনিট। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ট্রেন ছাড়বে সাড়ে ১০টায়। সব ঠিক থাকলে পৌঁছবে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। ১৭টি স্টেশনে দু’মিনিট করে দাঁড়াবে। শুধু মালদা টাউনে পাঁচ মিনিট। সেখানে রেল এবং বিজেপির তরফে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন থাকছে। একই ভাবে বন্দে ভারতকে স্বাগত জানাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে প্রান্তিক স্টেশন নিউ জলপাইগুড়িতেও।
প্রথম দিনের স্টপেজ বাছাইয়ে ‘রাজনীতির ছাপ’ স্পষ্ট। মালদহে বিজেপির চার বিধায়ক, এক সাংসদ আছেন। তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তকেও ‘খুশি’ করা হয়েছে প্রথম দিনের রুটে। তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বালুরঘাটের অন্তর্গত একলাখি স্টেশনে দু’মিনিটের জন্য হলেও দাঁড়াতে পারে বন্দে ভারত। একই ভাবে উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মুর এলাকা কুমেদপুর জংশনে স্টপেজ চেয়ে রেখেছে বিজেপি। তবে রাজ্য বিজেপি যুক্তিও তৈরি রেখেছে। যেখানে যেখানে ট্রেনটি থামবে, তার সব জায়গাতেই যে তাদের সাংসদ বা বিধায়ক নেই, সেই তালিকাও তৈরি রয়েছে। যদি রাজ্যের শাসকদল ওই বিষয়ে বিতর্ক তোলে! যদিও দলের পক্ষে এই বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।