প্রথম দলিত নেতা হিসেবে সিপিএমের পলিটব্যুরোতে জায়গা পেলেন রামচন্দ্র ডোম। ফাইল চিত্র।
ইতিহাস গড়লেন বীরভূমের রামচন্দ্র! তিনিই প্রথম দলিত নেতা, যিনি জায়গা পেলেন সিপিএম পলিটব্যুরোতে। রবিবার কন্নুরে ছিল সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের শেষদিন। সেখানেই ফের দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সীতারাম ইয়েচুরি। তিনিই পলিব্যুরোর সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেন। প্রথম ১৪ জন আগেই পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। এ বারের পার্টি কংগ্রেসে নতুন করে আরও তিনজনকে পলিটব্যুরোতে নেওয়া হল। সেখানেই প্রথম দলিত নেতা হিসেবে নাম ঘোষণা হল রামচন্দ্র ডোমের।
তাঁর নাম ঘোষণার সময় সীতারাম বলেন, ‘‘এ বার তিনজনকে পলিটব্যুরোতে নেওয়া হচ্ছে। প্রথমজন হলেন রামচন্দ্র ডোম। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীর পলিটব্যুরোর ইতিহাসে এই প্রথম কোনও দলিত পলিটব্যুরোর সদস্য হচ্ছেন। এমন সিদ্ধান্তে আমরা গর্ব অনুভব করছি।’’ পলিটব্যুরোয় বীরভূমের এই সিপিএম নেতার অন্তর্ভুক্তি অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। কারণ সিপিএমের অন্দরমহলে খবর ছিল, বাংলা থেকে নতুন পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে জায়গা পেতে পারেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। এক সময় তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক করার সিদ্ধান্তও পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পার্টির রাজ্য সম্পাদক হন মহম্মদ সেলিম। তারপরেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের একাংশের ধারণা ছিল, পলিটব্যুরো সদস্য করা হবে হাওড়ার জেলার নেতা শ্রীদীপকে।
কিন্তু পার্টি কংগ্রেসের শেষদিনে রামচন্দ্রকেই বেছে নিল সিপিএম পলিটব্যুরো। তবে তাঁর অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে জানা যাচ্ছে, এতদিন সিপিএমের পলিটব্যুরোতে কোনও দলিত প্রতিনিধি ছিলেন না। তাই তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবেই রামচন্দ্রকে পলিটব্যুরোয় জায়গা দেওয়া হয়েছে। কারণ বাংলার তো বটেই, ভারতের রাজনীতিতেও দলিত ভোটাররা ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তাই তাঁদের গুরুত্ব দিতেই পলিটব্যুরোয় জায়গা দেওয়া হয়েছে বোলপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদকে।
পশ্চিমবঙ্গ পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে রামচন্দ্রের। ১৯৯১ সালে বীরভূম লোকসভা থেকে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন রামচন্দ্র। তারপর টানা ছ’বার ওই আসন থেকেই সাংসদ নির্বাচিত হন। আসন পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৯ সালে বোলপুর লোকসভা থেকে প্রার্থী হয়ে সপ্তমবারের জন্য সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরার কাছে পরাজিত হন তিনি। এমন একজন অভিজ্ঞ দলিত রাজনীতিককে দেরিতে হলেও পলিটব্যুরো জায়গা দিল।
ঘটনাচক্রে, রবিবার রামনবমী। আর সেইদিনই রামচন্দ্রকে প্রথম দলিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পলিটব্যুরোয় নিল সিপিএম। তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা এমন ঘটনাকে নিছক কাকতালীয় বলছেন।