বাঁদিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। — ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গ সফরে গত মার্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পাহাড়ের মেয়েকে বাড়ির বৌমা করে নিয়ে যাবেন। বিষয়টি এ বার বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার তাঁর ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কার্শিয়াঙের এক তরুণীর বিয়ে। আর সেই বিয়ের বরকর্তা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (ববি)। সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এ কথা জানালেন মমতা। কেন ফিরহাদ বরকর্তা, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
মমতার ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে আবেশ। তিনি পেশায় চিকিৎসক। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর বিয়ে। সোমবার বিধানসভায় মমতা ওই বিয়ে প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার পরিবার নেই। তা-ও বলছি, আমার চিকিৎসক ভাইপোর বিয়ে। কার্শিয়াঙের পাহাড়ি মেয়ের সঙ্গে। সেই বিয়ের বরকর্তা ফিরহাদ হাকিম।’’ এর পরেই মমতা জানান, কেন ফিরহাদ ওই বিয়ের বরকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ভাইপোর ভিক্ষা মা ওঁর (ফিরহাদ) স্ত্রী।’’
সম্প্রতি দলনেত্রী মমতার সঙ্গে ফিরহাদের ‘মতানৈক্য’ বেশ কয়েক বার প্রকাশ্যে এসেছে। বিধানসভায় মমতার নির্দেশ মতো হাজিরা খাতায় সই করা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন ফিরহাদ। কে কখন বিধানসভায় প্রবেশ করছেন বা বেরিয়ে যাচ্ছেন, সেই হাজিরা খাতায় সই করে উল্লেখ করতে হয়েছে। এই নিয়ে ফিরহাদ প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘আমরা কি স্কুলে পড়ি নাকি!’’ এর আগে গত মার্চে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে ববির সব বিষয়ে কথা বলা নিয়ে ভর্ৎসনা করেছিলেন মমতা। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল, তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, ফিরহাদ যেন পুরসভা নিয়েই কথা বলেন। অন্য কিছু নিয়ে নয়। তবে কোনও কোনও সময়ে ফিরহাদের উপর ভরসাও রেখেছেন মমতা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জ্বালানির দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে ই-স্কুটারে চেপে নবান্নে গিয়েছিলেন মমতা। তখন স্কুটার চালিয়েছিলেন ফিরহাদ। এ বার সেই ফিরহাদ মমতার ভাইপোর বিয়ের বরকর্তা।
নবান্ন সূত্রের খবর, কার্শিয়াঙে গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার খুড়তুতো ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরেই তিনি রওনা হন উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে। বিমান ধরে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে সড়কপথে যান কার্শিয়াং। মঙ্গল এবং বুধবার তাঁর কী কর্মসূচি রয়েছে, জানা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার যোগ দেবেন বিয়ের অনুষ্ঠানে।
সম্প্রতি তৃণমূলে মমতা এবং অভিষেককে ঘিরে দুই শিবিরের মধ্যে ‘চাপানউতর’ চলেছে। অভিষেকের নেতৃত্বের পক্ষে সওয়াল করে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘ওঁকে (অভিষেক) বাদ দিয়ে তৃণমূল অসম্পূর্ণ।’’ কেন নেতাজি ইন্ডোরের বিশেষ অধিবেশনের মঞ্চে অভিষেকের ছবি ছিল না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। এবং তা প্রকাশ্যে। আবার কুণালকে পাল্টা বিঁধেছেন সৌগত রায়। তিনি বলেছেন, মমতার ছবি মঞ্চে ছিল, সেটাই যথেষ্ট। এই আবহে একই সঙ্গে পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলেছেন মমতা এবং অভিষেক যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ। আর তাঁদের এক সঙ্গে উপস্থিতি দলকেও বার্তা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।