শুক্রবার বিধানসভার সামনে দাঁড়িয়ে সুকান্তকে একহাত নেন ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল ছবি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের পর এ বার ফিরহাদ হাকিমের পালা। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ ভাবেই আক্রমণ করেছিলেন। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি)-কে গ্রেফতার করা হবে এর পর। শুক্রবার তারই পাল্টা দিলেন ফিরহাদ। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে মেয়র জানালেন, জেলে যেতে ভয় পান না তিনি। এ ভাবে সম্মানহানি করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ শীর্ষক একটি সাংগঠনিক সভা ছিল বিজেপির। ওই সভাতেই সুকান্ত বলেন, ‘‘তৃণমূলে অনেক চোর। তালিকা লম্বা। কেউ ছাড় পাবে না। পার্থ গিয়েছে, কেষ্ট (অনুব্রত) গিয়েছে, এ বার ববি যাবে!’’
শুক্রবার বিধানসভায় এসেছিলেন ফিরহাদ। সেখানে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কী এমন অন্যায় করলাম, যে আত্মসম্মান নষ্ট করে ফেলতে হবে? আত্মসম্মান কি রাজনীতিকদের থাকা উচিত নয়? সব সময় একটা হেনস্থা। কিছু নেটমাধ্যম রয়েছে, কিছু সংবাদমাধ্যম রয়েছে, তারা এ সব করে।’’ তিনি তৃণমূল করেন বলেই হেনস্থা করা হচ্ছে, এমন মন্তব্যও করেন ফিরহাদ। তাঁর কথায়, ‘‘ববি হাকিম তৃণমূল করে মানেই ও অশালীন! সুকান্তবাবুর দলে চলে গেলেই সে সাধু! এখানে থাকলে অসাধু, সেখানে গেলেই সাধু!’’
ফিরহাদের দাবি, দেশে সংবিধান আছে। আইন আছে। সরাসরি না বললেও সুকান্তকে তিনি বার্তা দিতে চেয়েছেন, বিজেপি সভাপতি বললেই কেউ গ্রেফতার হয়ে যাবেন না। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে আইন আছে। সংবিধান আছে। যা ইচ্ছা তাই করা যায় না। সবার একটা আত্মসম্মান আছে। রাজনীতি করার জন্য ব্যক্তিগত সম্মান নষ্ট। ব্যক্তিগত সম্মান নিয়ে টানাটানি করবেন না। কেন তল্লাশি শুধু অ-বিজেপি নেতাদের জন্য? বিজেপিতে কোনও অসাধু মানুষ নেই? তাঁর বাড়িতে রেইড হবে না কেন? তাঁর মিডিয়া ট্রায়াল হবে না কেন?’’
ফিরহাদ জানিয়েছেন, যত হুঁশিয়ারিই আসুক, তিনি ভয় পাবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে জানতাম, কলম তরোয়ালের থেকে বেশি শক্ত। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। প্রতিবাদ করে লড়ব। জেলে যেতে ভয় লাগে না। সম্মানহানিতে ভয় লাগে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছি তো, সেখানে সম্মানহানিটা বড় ভয় লাগে। ঢুকিয়ে দিন আমাকে জেলে। কোন এজেন্সি আছে, আসুন। আমি চলে যাচ্ছি আপনার সঙ্গে। কিন্তু সম্মানহানি করবেন না। আপনিও মায়ের ছেলে, স্ত্রীর স্বামী, বাচ্চার বাবা, আমিও তাই। দয়া করে সম্মানহানি করবেন না। কেসের আগে কেস। মিডিয়া ট্রায়াল। সোশাল মিডিয়া ট্রায়াল। কী পাপ করেছি আমি? যে অন্যায় করেছে, সে অন্যায় করেছে।’’ তিনি যে অতীতেও ভয় পাননি, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কলকাতার মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছিল। আমি হাসপাতালে থাকিনি। জেলে ছিলাম। আদালত বলেছিল জেলে থাকতে, জেলেই ছিলাম।’’
ফিরহাদের এই পাল্টা নিয়ে সুকান্ত শুক্রবার বলেন, ‘‘যদি অন্যায় করে থাকেন, তবে তো জেলে যেতেই হবে। অন্যায় করার আগে সম্মান নিয়ে ভাবা উচিত। যদি অন্যায় না করে থাকেন, তা হলে এত চিন্তার কী আছে। আরও একটা কথা, পার্থ, কেষ্টর যা যা জানা গিয়েছে, তৃণমূলের আর কিছু সম্মান আছে কি?’’