দত্তপুকুরের বাঁশবাগানে ছড়িয়ে বাজির মশলা, স্টোনচিপ্স। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েকটি বাঁশের উপর ত্রিপল বিছিয়ে ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। তার নীচে যেন ছড়িয়ে আছে আস্ত বাজির ‘সাম্রাজ্য’। ছোট ছোট পাথরের টুকরো (স্টোনচিপ্স), বাজির গুঁড়ো মশলা, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, কাগজের মোড়কে ছড়াছড়ি সেখানে। এ সবই বাজি তৈরিতে কাজে লাগে। সামান্য আগুনের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে উঠতে পারে দাউদাউ করে। দত্তপুকুরে বিস্ফোরণস্থলের পিছনের বাঁশবাগানে এমন ছবিই দেখা গেল ঘটনার এক দিন পর। এই বাগানে রবিবার গেল ফরেন্সিক দল। নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় বলে সূত্রের খবর।
বাঁশবাগানে ছাউনি খাটিয়ে যে বাজি তৈরি করা হত, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন, বাজির কাঁচামাল কি অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হত? না কি বাগানে বসেই মশলা বানাতেন কর্মীরা? তাঁদের কাঁচামালের জোগান দিত কে? সোমবার দত্তপুকুরে এল ফরেন্সিক দল। খতিয়ে দেখল বাঁশবাগানে মজুত বাজির মশলার পরিমাণ। এই মশলা কি শুধু বাজি তৈরি করতেই ব্যবহৃত হত? না বোমাও তৈরি করা হত তা দিয়ে? খতিয়ে দেখা হবে।
বাঁশবাগানের ত্রিপলের ছাউনিগুলিতে কোথাও রয়েছে শুধুই বাজির মশলা। কোথাও আবার অর্ধেক তৈরি ‘আলু বোম’ রাখা আছে স্তূপ করে। ছোট ছোট সেই ‘আলু বোম’ কালীপুজোর সময় শহরাঞ্চলেও বেশ জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে দেওয়ালে বা মেঝেতে ছুড়ে মারলেই বোম ফেটে ওঠে। ছোটরা অনেকে এই বাজি পছন্দ করেন। দত্তপুকুরের মোচপোলে বিস্ফোরণস্থলের পিছন দিকের বাঁশবাগানে সেই ‘আলু বোমে’র ছড়াছড়ি। রয়েছে তার বাইরের কাগজের মোড়কটিও। মশলা আর মোড়কের পাশে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারও রেখেছেন কেউ। এই ছোট ‘আলু বোম’ই বড় আকারে তৈরি করলে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ অসম্ভব নয়। বাজির আড়ালে বোমা তৈরি করা হত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাঁশবাগানের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, রবিবার পর্যন্তও সেখানে বাজি তৈরির কাজ চলেছে। কর্মীদের জামাকাপড়, জুতো এখনও পড়ে আছে মশলার স্তূপের পাশেই। বিস্ফোরণের পর হয়তো কাজ ফেলে পালিয়েছেন অনেকে।
রবিবার সকালে মোচপোল গ্রামে কেরমত আলির বাজির কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। কারখানাটি এখন ধ্বংসস্তূপ। আশপাশের বাড়িতেও বিস্ফোরণের আঁচ লেগেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক পাকা বাড়ি। ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ন’জন। সূত্রের খবর, কারখানার মালিক কেরামতেরও মৃত্যু হয়েছে এই বিস্ফোরণে। রবিবার গভীর রাতে নীলগঞ্জ এলাকা থেকে কেরামত আলির ‘সহযোগী’ শফিক আলি ওরফে সফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে বিস্ফোরণস্থলে পুলিশ, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ভিড় লেগেই রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে গ্রামের পরিস্থিতি দেখতে আসছেন অনেকে। ইতিউতি মজুত থাকা বাজির মশলা থেকে আবার কোনও বিস্ফোরণ হবে না তো? আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না মোচপোলবাসীর।