প্রতীকী ছবি
অন্যান্য বছরে উৎসবের মরসুমে তার দাপটে হিমশিম খায় পুলিশ-প্রশাসন। ধরপাকড় চালিয়েও বিশেষ লাভ হয় না। লকডাউন পর্বের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী প্রদীপ জ্বালানোর ডাক দেওয়ার সময়ে ফের শব্দবাজির দাপট দেখেছিল শহর। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে এইসব শব্দবাজি এখন জব্দ হওয়ার মুখে! কারণ, কোভিড-আবহে বাজির সলতে পাকানোর লোক পাওয়াই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বহু বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থা এ বছর এখনও কারখানাই খুলতে পারেনি।
সাধারণত অক্টোবরে উৎসবের মরসুম থেকে বাজি বিক্রি হলেও উৎপাদন শুরু হয় ফেব্রুয়ারি থেকেই। মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সেই বাজি পৌঁছে যায় জেলায় জেলায়। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত কোনও বাজিই অন্যত্র পাঠানো যায়নি। নুঙ্গির বাজি প্রস্তুতকারী কারখানার মালিক শ্যামল কর্মকার বলছেন, “পুজোর আগে এক সঙ্গে প্রচুর বাজি জেলায় পাঠাতে গেলে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই আগেভাগেই জেলায় বাজি পৌঁছনো হয়। তা ছাড়া মার্চ থেকে জুলাই, ওই সময়ে বাজি ধরতে কেউ ব্যস্ত থাকেন না।” এক নামী বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুমন কর্মকার আবার বললেন, “অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, লোহাচুর, গন্ধকের মতো কাঁচামাল মূলত আসে ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশা থেকে। এ বার সেই কাঁচামালের প্রায় কিছুই এসে পৌঁছয়নি। গত এক মাসে যে টুকু এসেছে, তা প্রয়োজনের ১০ শতাংশ মাত্র।”
মাঝেরহাটের বাজি ব্যবসায়ী তন্ময় সর্দারের আবার দাবি, “শব্দ বা আতসবাজি তৈরির কাজ যে হেতু যন্ত্রনির্ভর নয়, তাই তৈরি করতে সময় লাগে।” তিনি জানান, একটি
ফুলঝুরি তৈরিতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। ফুলঝুরির গায়ে দাহ্য কোটিংয়ের জন্য দ্রবণে কয়েক দিন অন্তর লোহার শিক ডোবাতে হয়। এক বার ডুবিয়ে তুলে শুকিয়ে নিয়ে তিন দিন পরে ফের ডোবাতে হয়। এ ভাবে বার চারেক দ্রবণে ডোবালে তবে একটি ফুলঝুরি তৈরি হয়। একটি শব্দবাজি তৈরি করতে সেখানে সময় লাগে দু’-আড়াই সপ্তাহ। শব্দবাজির আওয়াজের তীব্রতা নির্ভর করে তার বাঁধুনির উপরে। শব্দবাজি তৈরির কাজ শেখাতে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে যে সমস্ত শ্রমিক অন্য বছরে কলকাতায় আসতেন, তাঁরাও এ বার আসতে পারেননি বলে বাজি ব্যবসায়ীদের দাবি।
শব্দ-জব্দের আরও এক কারণের কথা শোনালেন কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের কর্তারা। প্রতি বছর উৎসবের আগে তাঁরাই শহরের পাঁচটি বাজি বাজারের জন্য শব্দপরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। শব্দবিধি অনুযায়ী বৈধ হলে তবেই সেই বাজি বিক্রির ছাড়পত্র দেয় পুলিশ। রিজার্ভ ফোর্সের এক পুলিশ কর্তা বলেন, “বাজি বিক্রেতাদের আরও একটি সমস্যা, গত বছরে রয়ে যাওয়া পুরনো বাজি।” তিনি জানান, গত বছর বৃষ্টির জেরে অনেকেরই সব বাজি বিক্রি হয়নি। এ বার সেগুলিই আগে বিক্রির কথা ভাবা হয়েছিল। ফলে এমনিতেই চাহিদা কম থাকায় গত বারের তুলনায় শব্দবাজির উৎপাদন কম হত বলে ওই পুলিশ আধিকারিকের দাবি। পশ্চিমবঙ্গ বাজি বাজার উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না আবার
বললেন, “দূরত্ব-বিধির কারণে এ বছর বাজি বাজার না বসলে বেআইনি বাজি বিক্রির রমরমা কিন্তু বাড়তে পারে। পুলিশ-প্রশাসনের সেই দিকটা ভাবা দরকার।”
তবে কি বাজির দাপটে লাগাম পড়ানোর কাজটা পুলিশের জন্য সহজ করে দিল করোনা? ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) সুখেন্দু হিরা বলছেন, “বাজি তৈরি যে ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে, তা সত্যি। তবে পুলিশের সুবিধা হল কি না, তা বলা যায় না। শুধু তো শব্দবাজি প্রতিরোধ করাই নয়, আতসবাজি মানুষের কাছে পৌঁছোচ্ছে কি না, তা-ও আমাদের দেখার বিষয়।”