সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
সন্ময়-কাণ্ডে জুড়ে গেল নন্দীগ্রামও। তাঁর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় দায়ের করা একটি অভিযোগ ঘিরেও নাড়াচাড়া হয়েছে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র ও প্রাক্তন কাউন্সিলর সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামাজিক মাধ্যমের লেখালেখির জেরে তাঁকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর অভিযোগে তোলপাড় চলছে। নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ করেছেন। শুভেন্দুর দাবি ছিল, আইনি নোটিস আর উকিলের চিঠিচাপাটিতেই আটকে ছিল সেই প্রক্রিয়া। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম থানায় দায়ের করা ওই লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্ময়ের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তার প্রেক্ষিতে হলদিয়া মহকুমা আদালতে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আবেদনও করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
তবে হলদিয়া মহকুমা আদালত নন্দীগ্রামের মামলায় গ্রেফতারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। হলদিয়া মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী ভি কে রাম জানান, ১৯ অক্টোবর নন্দীগ্রাম পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের যে আবেদন করা হয়েছিল, আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে।
সমাজ মাধ্যমে ‘ভিত্তিহীন’ ভিডিয়োয় শুভেন্দুকে অসম্মান করা হয়েছে— গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই অভিযোগ করেন নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় বিধায়ক কার্যালয়ের কর্মী নয়ন সামন্ত। নন্দীগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ইউটিউবে ‘রতন বাবুর কীর্তি' এবং ‘নবরত্ন শুভেন্দু অধিকারী’ এই দুটি ভিডিয়োয় মন্ত্রী শুভেন্দুকে ‘ঘুষখোর’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে যার বাস্তবে কোন প্রমাণ বা ভিত্তি নেই।
নয়নের এই অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযুক্ত সন্ময়ের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে সন্ময়কে উপস্থিত হওয়ার জন্য ৪১-এ নোটিস পাঠানো হয়। সন্ময় জবাবে জানান, সময়মতো হাজিরা দেবেন। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ায় অন্য সাইবার মামলায় পুলিশ সন্ময়কে গ্রেফতার করে। সেই মামলায় জামিন পেয়েছেন সন্ময়। নন্দীগ্রামের মামলাতেও আপাতত গ্রেফতারের সম্ভাবনা নেই।
রাজনৈতিক চাপানউতোর অবশ্য থেমে নেই। সন্ময়-কাণ্ডে সুর চড়াতে শুরু করেছেন নন্দীগ্রামের জেলার বিরোধীরাও। কংগ্রেস নেতা মানিক ভৌমিক বিচারাধীন বিষয় মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সরব হয়েছে বিজেপি ও বামেরা। বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘বিজেপির জনপ্রিয়তায় বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন মন্ত্রী। তাই সত্যি কথাকে ভয় পাচ্ছেন। নিজের অনুগামীদের দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করাচ্ছেন।’’ হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের কথায়, ‘‘এটাই তৃণমূলী সংস্কৃতি। তবে এ ভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করলেই কি আর নিজেদের পতন আটকানো যাবে!’’
তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী অবশ্য এমন অভিযোগে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না। শিশির বলেন, ‘‘যে ভাবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অবমাননা করা হয়েছে, তাতে শুধু নন্দীগ্রাম কেন রাজ্যের সব থানাতেই এমন অভিযোগ হবে। আর এ নিয়ে পাল্টা কিছু বলার থাকলে আদালতে যাওয়াই ভাল।’’