R G Kar Hospital Incident

আরজি করে অপরাধস্থল কোথায়? সিবিআইয়ের নজরে তিন-চারটি ঘর, কী বলছেন গোয়েন্দারা?

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের মতে, সেমিনার হল লাগোয়া ঘরগুলি ভাঙাভাঙিতেও তদন্তের অভিমুখ গুলিয়ে দেওয়ার মতলব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা চলছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩২
Share:

আরজিকর কাণ্ডে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীদের মিছিলে শঙ্খ বাজিয়ে প্রতিবাদ। ছবি: সুমন বল্লভ।

কয়েকটি ঘরের মধ্যে এখন ঘুরছে গোয়েন্দা নজর।

Advertisement

সিবিআই সূত্রে খবর, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের তিন-চারটি ঘর নজরবন্দি করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেমিনার হলের লাগোয়া একটি ঘর, শৌচালয় এবং তারও ভিতরে একটি ঘর তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। এর মধ্যে সেমিনার হল লাগোয়া ঘরটি এবং শৌচালয় ভেঙে ‘মেরামতির’ কাজ শুরু হয়েছিল ডাক্তার ছাত্রীর খুন ও ধর্ষণের ঘটনাটির কয়েক দিনের মধ্যে। কিন্তু ভিতরের অন্য একটি ঘরে অপরাধের কিছু সূত্র থাকতে পারে বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে।

ওই ভিতর-ঘরে রোগীদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হত। কিন্তু কাউকে ভর্তি করা হত না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। তবে ঘরটিতে রোগীকে শোয়ানোর ‘বেড’ রয়েছে। ওই ঘরেই অপরাধের প্রকৃত ঘটনাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের একাংশ উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

Advertisement

ওই তদন্তকারীদের কথায়, গত ৮ অগস্ট রাত ন’টার পরে মৃতা চিকিৎসক-সহ বেশ কয়েক জনের ওই ভিতর-ঘরে যাতায়াতের সূত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে সেমিনার হল লাগোয়া যে ঘরটি ভাঙা হয়েছিল, সেখানে তেমন কারও যাতায়াত হয়নি বলেই তদন্তকারীদের হাতে আসা সূত্রে বোঝা যাচ্ছে। সিবিআইয়ের কয়েক জন আধিকারিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, মৃতা চিকিৎসক ছাত্রী এবং তাঁর সঙ্গে কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারদের মোবাইল জরিপ করেই তাঁদের গতিবিধির খুঁটিনাটি সূত্র হাতে আসছে। বিশেষত যে ঘরটি ভাঙা হয়েছিল, সেখানে মৃতার যাতায়াতের আপাতত কোনও সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।

ওই তদন্তকারীদের মতে, এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে আসা নানা ইঙ্গিত এবং জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনা সেমিনার রুমের পরিবর্তে অন্যত্র ঘটেছিল‌ বলে মনে হচ্ছে। পরে মৃতদেহ সেমিনার হলে সাজিয়ে রাখার সম্ভাবনাই তাঁরা দেখছেন। এর মধ্যে ৯ অগস্ট সকালে সেমিনার হলের থিকথিকে ভিড়ে প্রমাণ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে নানা মহলে। সেমিনার হল লাগোয়া একটি ঘর, শৌচালয় ভাঙাভাঙির পিছনে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের মতলবও অনেকেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কিন্তু এখনও অক্ষত রোগী দেখার ভিতর-ঘরটিকে ঘিরে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একেবারে ভিতর দিকের ওই ঘরটি আচমকা ভাঙা সম্ভব ছিল না বলে তদন্তকারীদের কারও কারও ধারণা।

সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন,‘‘তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে থ্রিডি স্ক্যানার ও ভিডিয়োগ্রাফির মাধ্যমে সেমিনার হল এবং চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সব জায়গা খুঁটিয়ে দেখানো হয়েছে। তা ছাড়া ওই রাতের কর্তব্যরত জুনিয়র, সিনিয়র চিকিৎসক এবং নিরাপত্তারক্ষী ও নার্সদের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন জরিপ করা হয়েছে।’’ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণেই অপরাধের প্রকৃত ঘটনাস্থলটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে, দাবি সিবিআইয়ের। বিশেষত চেস্ট মেডিসিন বিভাগের রোগী দেখার ওই শয্যাবিশিষ্ট ভিতর-ঘরে নিহত চিকিৎসক ছাত্রী কতক্ষণ ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে কে কে সেখানে ছিলেন— এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গিয়েছে।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের মতে, সেমিনার হল লাগোয়া ঘরগুলি ভাঙাভাঙিতেও তদন্তের অভিমুখ গুলিয়ে দেওয়ার মতলব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা চলছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘মৃতদেহ উদ্ধারের পরে ওই ঘরে কয়েক জন পোড়খাওয়া চিকিৎসক, আইনজীবীর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। সাত তাড়াতাড়ি নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা যাওয়ার আগে তাঁরা ওই ঘরে কী করছিলেন, তা যথেষ্ট ভাবার বিষয়।’’ তবে তদন্তকারীদের মত, প্রমাণ লোপাটের কোনও চেষ্টা হলেও, প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণের মধ্যে দিয়ে প্রকৃত ঘটনা স্পষ্ট হওয়া সম্ভব। ওই সিবিআই কর্তা বলেছেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছিল, তার একটি সম্ভাব্য চিত্রনাট্যের ছবি আমাদের সামনে পরিষ্কার। কিন্তু সব কিছুর আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা সময়সাপেক্ষ। সেই কাজটাই চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement