মেঘলা দিনে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে গন্তব্যের পথে। বৃহস্পতিবার, হাওড়া ময়দান এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
নিম্নচাপের কারণে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাতেই আতঙ্কিত চিকিৎসকেরা। কারণ, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির জেরে জমা জলে এডিস ইজিপ্টাই মশা বংশবিস্তার করলে আবারও ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যা আরও তিন-চার সপ্তাহ চলতে পারে।
চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করায় ভাবা হয়েছিল, এ বার ডেঙ্গির প্রকোপ কমবে। কিন্তু আবারও জল জমার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়, মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’’ শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখনও প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। চলতি মরসুমের প্রথম থেকেই ডেঙ্গি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর সরকারি ভাবে কিছু বলেনি।
বেসরকারি সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত প্রায় ৯২ হাজার। মৃতের সংখ্যা ৭১। নতুন করে ফের জমা জলে মশার বংশবিস্তার করতে সুবিধা হতে পারে বলেই মত পরজীবী বিশেষজ্ঞদের। সবে শেষ হয়েছে কালীপুজো। এখন বৃষ্টি হলে ভাঙা মণ্ডপের ফাঁক-ফোকরে ফের জল জমতে পারে বলে আশঙ্কা পুরকর্তাদেরও।
প্রতি বছরই গরমের পরে হালকা ঠান্ডা ও শুকনো আবহাওয়ার সূচনা-লগ্ন থেকে বিদায় নিতে শুরু করে ডেঙ্গি। এ বার নভেম্বরের মাঝামাঝি কালীপুজোর সময় থেকেও তেমনই আবহাওয়া দেখা দিয়েছে। কিন্তু হিমেল হাওয়া বইলেও ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত তেমন কমেনি। বরং, গত কয়েক দিনে মশার দাপট আরও বেড়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার প্রকোপ পুরোপুরি কমেনি। সেখানে বৃষ্টির জমা জলে এডিস মশা বংশবিস্তার করলে, ফের ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে যায়।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নীচে হলে ডেঙ্গির মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা কমে যায়। কিন্তু তাপমাত্রা তার উপরে থাকলে সেটা সম্ভব নয়। তখন মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ থেকেই যায়।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের দিকে যাবে। তার প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে কয়েক দিন বৃষ্টি হবে বলে জানানো হয়েছে। তাতে ডেঙ্গিপ্রবণ জেলাগুলিতে ফের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারাও।
তবে, ডেঙ্গি এখন বর্ষব্যাপী রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই মত পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গির প্রকোপ আগের থেকে কিছুটা কমেছে। কিন্তু আবারও বৃষ্টি হলে যদি জল জমে, তা হলে মশার বংশবিস্তার হতে পারে। তখন ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিতে এখনও সঙ্কটজনক রোগী মিলছে। ফলে মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ ফের বাড়লে সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। তাতে রাজ্যে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও বাড়বে।