জমিরুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র।
রাজেকুল ইসলাম কাজ করেন সেনাবাহিনীতে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে তিনি জম্মুতে ‘পোস্টেড’। আর গ্রামের বাড়িতে দেশছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগে দিন কাটছে বৃদ্ধ বাবা শেখ জমিরুদ্দিনের।
কেন? কারণ, আধার কার্ডে তাঁর বাবার নাম ভুল। তাই নথি ঠিক করতে দোরে দোরে ঘুরছেন বৃদ্ধ। কোথায় তা সংশোধন হবে, পরিচিত কাউকে দেখলেই জিজ্ঞেস করছেন সে কথা। কিন্তু এখনও নথি ঠিক করতে পারেননি তিনি। ফলে লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে অমিত শাহ যে বলেছিলেন, সিএবি-র পরে দেশ জুড়ে এনআরসি হবে, তার পর থেকে নথিপত্র জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ শেখ জমিরুদ্দিন। যত দিন যাচ্ছে, তাঁর মাথায় চেপে বসছে দেশছাড়া হওয়ার ভয়। আপাতত ডাকঘরে আধার কার্ড সংশোধনের নতুন আবেদন নেওয়া হচ্ছে না। তাই আতঙ্কটা বেড়েছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক সব্যসাচী রায় বলেন, ‘‘আধার কার্ড সংশোধনের জন্য ডাকঘর, ব্যাঙ্কের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।’’
জমিরুদ্দিনের ছোট ছেলে রাজেকুল। বড় ছেলে বাবুল আলম চাষবাস করেন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পড়শিরা বলছিলেন, সব সময় হইচই লেগে থাকত জমিরুদ্দিনের বাড়িতে। কিন্তু এনআরসি নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। গোলমালের কারণ, জমিরুদ্দিনের বাবার নামে ছোট্ট একটি ভুল। নাম শেখ কালু মহম্মদ। অথচ কয়েকটি নথিতে রয়েছে কালু মহম্মদ। বাদ পড়েছে শেখ। তিনি ৪০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। এখন এই ভুল নিয়ে নাজেহাল গোটা পরিবার।
আরও পড়ুন: দিলীপের ‘নেতৃত্বে’ মেডিক্যাল কলেজ, চিঠি দিল কেন্দ্র! হতবাক নবান্ন
জমিরুদ্দিনের চিন্তা, নথি ঠিক না হলে তো দেশ ছাড়তে হবে! বড় ছেলেকে চাষবাসের কাজ করতে হয়। তাই বৃদ্ধ নিজেই অশক্ত শরীরে খোঁজ করছেন, কোথায় গেলে নথি ঠিক করা সম্ভব হবে। কিন্তু ভোটার কার্ড সংশোধনের কাজ আপাতত বন্ধ। আধার সংশোধনও ডাকঘর স্থগিত রেখেছে। তাই রোজই হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি। জমিরুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা বরাবরই এখানকার বাসিন্দা। আমার ছেলে দেশের একজন সৈনিক। ভারতবাসী হিসেবে আমরাও গর্বিত। কিন্তু কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি।’’