ছেলের সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন সাক্ষাতের অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মা-হারা বছর দশেকের ছেলে দাঁড়িয়ে থাকবে বারান্দায়। বাবা তাকে দেখবেন নীচ থেকে। সপ্তাহের একটি দিন হবে সেই সাক্ষাৎ। কিছু ক্ষণের জন্য। ছেলের সঙ্গে দেখা করার অধিকার সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকার।
পুলিশ জানায়, উত্তর ২৪ পরগনার টাকি রেজিপুরের বাসিন্দা এক শিক্ষকের সঙ্গে বসিরহাটের এক তরুণীর বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। ওই শিক্ষক ন্যাজাট খড়মপুর হাইস্কুলের ইংরেজি পড়ান। ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অগ্নিদগ্ধ হন তাঁর স্ত্রী। সাত দিন পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার দিনেই তরুণীর বাবা মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি এবং জামাইয়ের বিরুদ্ধে বধূ-নির্যাতন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন এবং নাতিকে নিয়ে চলে যান। বধূ-নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিছু দিন পরে তিনি জামিন পান।
২০১৭-র জুনে জামাইয়ের বিরুদ্ধে বসিরহাট থানায় তিনটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মেয়ের বাবা। তার মধ্যে একটি অভিযোগ, তাঁর নাতি স্কুলে যায়। জামাই রাস্তা থেকে তাঁর নাতিকে অপহরণের চেষ্টা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নিজের ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে জেনে বারাসত আদালতে মামলা করেন ওই শিক্ষক। আবেদনে শিক্ষক জানান, তিনি ছেলের অভিভাবকত্ব ফিরে পেতে চান। আদালত শ্বশুরের জিম্মা থেকে ছেলেকে তাঁর জিম্মায় ফিরিয়ে দিক।
বারাসত আদালত জানায়, শিক্ষকের বিরুদ্ধে বধূ-নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার যে-মামলা চলছে, তাতে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার সাক্ষী করেছেন তাঁর একমাত্র ছেলেকে। ছেলের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হলে অভিভাবকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি বিবেচনা করা হবে। বারাসত আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ওই শিক্ষক। সেই মামলায় যুক্ত করেন শ্বশুরকেও।
শিক্ষকের আইনজীবী জানান, সেই মামলায় এর আগের শুনানিতে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, ছেলেটিকে আদালতে হাজির করাতে হবে। নাতিকে নিয়ে এ দিন আদালত কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দাদু। বিচারপতির নির্দেশে আদালতের এক কর্মী তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রটিকে এজলাসে নিয়ে যান। বিচারপতি ছেলেটিকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। ছেলেটি তার উত্তরও দেয়। উত্তর শুনে বিচারপতি সরকার জানিয়ে দেন, আপাতত প্রতি শনিবার বিকেলে মিনিট দশেকের জন্য বাড়ির বারান্দায় দাঁড়াবে ছেলে। তার শিক্ষক বাবা তাকে নীচ থেকে দেখে চলে যাবেন।
শিক্ষকের আইনজীবী জানান, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।