মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিলীপ ঘোষ।—ফাইল চিত্র।
জেএনইউ-কাণ্ড ঘিরে রাজনীতির পারদ তুঙ্গে উঠতে শুরু করল পশ্চিমবঙ্গে। রবিবার সন্ধ্যায় জেএনইউ-তে যা হয়েছে, তাকে ‘ফ্যাসিস্ট সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দায় সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঠিক উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে জেএনইউ চত্বরে ঘটে যাওয়া তাণ্ডবকে কার্যত সমর্থন করলেন দিলীপ ঘোষ। বললেন, ‘‘হিসেব বরাবর হচ্ছে।’’
রবিবার সন্ধ্যায় জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ আরও অনেক পড়ুয়ার উপরে হামলার খবর আসতেই টুইটারে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে তিনি ফের মুখ খুললেন। আরও কড়া ভাষায় বললেন, ‘‘এটা একটা ফ্যাসিস্ট সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।’’ শুধু জেএনইউতে বা দিল্লিতে নয়, লখনউ, মোরাদাবাদ-সহ গোটা দেশে একই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলেও তোপ দাগলেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘আমি আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছি ছাত্র রাজনীতি দিয়েই। আমি ছাত্র রাজনীতিটা খুব ভাল ভাবে জানি। গণতন্ত্রের উপরে যে রকম ভয়ঙ্কর আঘাত হানছে, কেউ মুখ খুললেই যে ভাবে পাকিস্তানি বলে দাগিয়ে দিচ্ছে, সে রকম ভারতে কখনও হয়নি।’’ গোটা ছাত্র সমাজের প্রতি এ দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমি পুরো ছাত্র সমাজকে বলব, একত্রিত হন, একসঙ্গে লড়াই করুন, আসুন এই সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করি।’’
দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘খুব ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমি জানি না কালকে কী হবে। যেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম লড়ছি।’’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের বয়ান কিন্তু একেবারেই উল্টো। তৃণমূল চেয়ারপার্সন এবং বিজেপি সভাপতির বয়ান বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পর বিরোধীই হয়। কিন্তু জেএনইউতে রবিবার যা ঘটেছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তা সমর্থন করতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন থেকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর— প্রত্যেকেই নিন্দা করেছেন জেএনইউ চত্বরে মুখোশ পরে হামলা চালানোর। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরও টুইটারে সরব হয়েছেন ওই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে। অমিত শাহের হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে টুইট করা হয় বিষয়টি নিয়ে। হামলার নিন্দা সেখানে ছিল না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক উদ্বিগ্ন— এমন একটা বার্তা ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। বিজেপির টুইটার হ্যান্ডল থেকেও হামলার নিন্দা করা হয়।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিনও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই গরম মন্তব্যে অনড়। তিনি বলেন, ‘‘এ দেশে কনিউনিস্টদের মারা শুরু হয়েছে। মনে হয় এটা ওদের পাওনা আছে। কারণ ওরা যা আচরণ করেছে, তাতে এটা ওদের পাওনা। হিসেব বরাবর হচ্ছে।’’ শিক্ষাঙ্গনে মারামারির সংস্কৃতি কমিউনিস্টরা এবং কংগ্রেসই আমদানি করেছে— এই অভিযোগও এ দিন তুলেছেন দিলীপ। তাঁর কথায়, ‘‘জেএনইউ কাদের আখড়া? ওখানে মারপিট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শিক্ষাঙ্গন মারামারির জায়গা নয়। কিন্তু কে আমদানি করেছে? কমিউনিস্টরা আমদানি করেছে। এসএফআই-কংগ্রেস আমদানি করেছে।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মন্ত্রীকে মারা হল, চুলের মুঠি ধরে টানা হল। তখন মমতার বিবেক জাগেনি। রাজ্যপালকে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হল, গাড়ি আটকে কালো পতাকা দেখানো হল। তখন নিন্দা জানাননি।’’
মমতা অবশ্য এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। রাজ্যপালের নাম তিনি করেননি। তবে সাংবিধানিক পদাধিকারীরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে মমতা এ দিন ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁদের কিসের সঙ্ঘাত? প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।