ফের আখখেতে আগুন

হতাশায় রবিবারই নিজের খেতে আগুন লাগিয়েছিলেন নিরঞ্জন বিশ্বাস নামে শান্তিপুরর হরিপুর গ্রামের এক আখচাষি। সোমবার ফের আখখেতে আগুন ধরালেন ওই গ্রামেরই চাষি রফিক শেখ। তিনি আখ চাষ করবেন না বলেই পণ করেছেন।

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৪
Share:

দাম মিলছে না। হতাশায় খেতে আগুন লাগিয়ে দিলেন আখচাষি। সোমবার হরিপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ফলন আছে। কিন্তু ফসল বিক্রি করতে গিয়ে দাম পাচ্ছেন না কৃষক। সবটা যে বিক্রি করতে পারছেন, এমনটাও নয়। সব মিলিয়ে সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন চাষিরা।

Advertisement

হতাশায় রবিবারই নিজের খেতে আগুন লাগিয়েছিলেন নিরঞ্জন বিশ্বাস নামে শান্তিপুরর হরিপুর গ্রামের এক আখচাষি। সোমবার ফের আখখেতে আগুন ধরালেন ওই গ্রামেরই চাষি রফিক শেখ। তিনি আখ চাষ করবেন না বলেই পণ করেছেন। কিন্তু সারা দিনে কৃষি দফতরের কোনও কর্তা গ্রামে যাননি। শান্তিপুরের সহকারী কৃষি অধিকর্তা সন্দীপ মিত্র ফোন করে নিরঞ্জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পঞ্চায়েতেও খোঁজখবর নিয়েছেন বলে খবর।

শান্তিপুরে যে খুব বেশি আখ চাষ হয়, তা নয়। তবে কৃষি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি এখানে সামান্য হলেও আখ চাষের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু এখানকার আখ চিনি কলে যায় না বা গুড় তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হয় না। মূলত আখের রস খাওয়ার জন্যই তার কদর। কলকাতা ও আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আখ কিনে নিয়ে যান। সেই কেনাতেই এই বছর ভাটা পড়েছে।

Advertisement

এ দিন শান্তিপুরের সুত্রাগড় গাইনপাড়ার বাসিন্দা রফিক শেখ তাঁর জমির আখগাছ পুড়িয়ে দেন। প্রায় দেড় বিঘার মতো জমিতে তিনি চাষ করেছিলেন। রফিক জানান, চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার টাকা। পুরো জমির আখের দাম ধরেছিলেন প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। এক ব্যবসায়ী এসে দরদামও করে যান। কিন্তু হাজার দশেক টাকার আখ নেওয়ার পরে তিনি আর আসেননি। ফলে বাকি ফসল সেই জমিতেই পড়ে রয়েছে। রফিক বলেন, “এ বার এখানে সর্ষে বা অন্য কিছু চাষ করব। জমি তো এ ভাবে ফেলে রাখা যাবে না। এ বারই প্রথম আখের চাষ করেছিলাম। আর করবনা।” এমন অবস্থা কেন? রফিক শেখ, আরফাত আলিরা জানান, আখ গাছ যদি সোজা না থাকে তা হলে ব্যবসায়ীরা সেই আখ কিনতে চান না। এ বার অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় আখ গাছ হেলে বেঁকে গিয়েছে। তা ছাড়া, কলকাতার আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় আখের উৎপাদনও বেশি হয়েছে। দুইয়ে মিলে এখানকার আখের চাহিদা কমেছে। কলকাতা থেকে এত দূরে এসে তাঁরা আখ নিয়ে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

এই এলাকার আখচাষিরা জমিতে আখের পাশাপাশি ধান, পাট ইত্যাদি ফসলেরও চাষ করেন। কিন্ত এ বারের আখচাষের মতো অভিজ্ঞতা আগে তাঁদের হয়নি। কৃষিপণ্য বিপণনে যার অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, সেই সব কিসান মান্ডি কার্যত নিষ্ক্রিয়। শান্তিপুর ব্লকেরই ফুলিয়া এলাকায় একটি কিসান মান্ডি রয়েছে। কিন্তু শুধু সহায়ক মূল্যে ধান কেনাবেচার কাজ ছাড়া তার আর কোনও তার কোনও কার্যকারিতা নেই। রাতে শান্তিপুরের সহকারী কৃষি অধিকর্তা জানান, আজ, মঙ্গলবার তিনি হরিপুর গ্রামে যাবেন। নদিয়ার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরীর দাবি, “আমরা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাঁরা যদি আখ বা অন্য চাষে আগ্রহী হন, সহযোগিতা করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement