—প্রতীকী ছবি।
অসময়ের বৃষ্টিতে চিন্তার ভাঁজ পড়ল চাষিদের কপালে। ধান কাটার কাজ শেষ পর্যায়ে। অনেক জায়গায় এখনও মাঠে ধান হয়েছে। অনেকের আবার জমি বা খামারে ডাঁই করা আছে কাটা ধান। বহু জমিতে আলুর বীজ বোনা শুরু হয়েছে। মাঠ থেকে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন আনাজ। এমন পরিস্থিতিতে এই দুর্যোগে মাথায় হাত চাষিদের।
বৃষ্টির পূর্বাভাসেই গত দিন দুয়েকে বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে বলে অভিযোগ। শীতের আনাজের দাম কমার যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল, তা-ও এর ফলে ধাক্কা খেতে পারে বলে দাবি বিক্রেতাদের। কৃষি দফতর অবশ্য ক্ষতির আশঙ্কাকে এখনই আমল দিতে নারাজ। দফতরের কর্তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে এর ফলে আলু চাষ পিছিয়ে যেতে পারে, মানছেন তাঁরা। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার শুধু বলেন, “পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।”
চাষিদের একাংশের দাবি, নানা কারণে এমনিতেই জলদি জাতের আলু এ বার তেমন চাষ হয়নি। অনেক জমিতে সদ্য আলুবীজ বোনা হয়েছে। এই বৃষ্টিতে তা নষ্টের আশঙ্কা থাকছে। চাষিরা জানান, ফের বীজ কিনে চাষ করতে গেলে খরচ বাড়বে, ফসলও উঠবে দেরিতে। গত মরসুমে রাজ্যের হিমঘরে প্রায় ৬৩ লক্ষ টন আলু মজুত হয়েছিল। এখনও তার প্রায় ৯% মজুত রয়েছে। বৃষ্টির কারণে চাষিদের ফের চাষ করতে গেলে ওই আলুর প্রায় ৩% বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তাতে বাজারের জন্য মজুত আলুতে টান পড়বে। ফলে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা।
পরিস্থিতি বুঝে ইতিমধ্যে নানা বাজারে আলুর দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ। গত সপ্তাহেও যে আলু ১৮-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, বৃহস্পতিবার কিছু জায়গায় তা দাঁড়ায় ২০-২১ টাকায়। যদিও ‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র রাজ্য সম্পাদক বরেণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বীজের জন্য ফের আলু দরকার হলে বাজারের আলুতে টান পড়তে পারে। তবে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবের আলু ঢোকায় সমস্যা হবে না।’’
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলা বিশেষে ৭৪ থেকে ৯৫ শতাংশ আমন ধান মাঠ থেকে উঠে গিয়েছে। তবে বৃষ্টিতে চিন্তা কেটে রাখা ধান নিয়ে। ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ নানা শীতকালীন আনাজ এখন জমি থেকে তোলার সময়। মেঘলা আবহাওয়া ও বৃষ্টিতে আনাজ গাছে গোড়াপচা ও ছত্রাকঘটিত রোগের আশঙ্কা রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ফুলচাষেও ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পেঁয়াজ, গম, সর্ষে, ভুট্টা, ডালশস্য নিয়েও ভাবনায় চাষিরা। যদিও কৃষি আধিকারিকদের অনেকের দাবি, এই বৃষ্টি গম ও সর্ষে চাষে সহায়ক হতে পারে। জেলার রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে।