অনিল ঘোষ
এক ভাগচাষির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়ে গেল নোট বাতিল কাণ্ড। শিবু মান্ডি (৬০) নামে ওই চাষির বাড়ি বর্ধমানের কালনা ২ ব্লকের একচাকা গ্রামে। সোমবার সকালে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলেন। দুপুরে ফিরে বাড়ির পাশে গাছে শিবুবাবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তাঁরা।
মৃত শিবু মান্ডির ছেলে মিলনের অভিযোগ, ‘‘বাবা বিঘে দেড়েক জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলেন। তবে পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট খেতমজুরেরা নিতে না চাওয়ায় বাবা খুব সমস্যায় পড়েন। অথচ খেতমজুরেরা বারবার মজুরির জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। এই নিয়ে বাবা ও মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়।’’ মিলনের আরও দাবি, হতাশাগ্রস্ত হয়েই শিবুবাবু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। মৃতের স্ত্রী সুন্দরী মান্ডি জানান, খেতমজুরেরা মজুরি বাবদ দু’হাজার টাকা পেতেন। সোমবার সন্ধ্যায় কালনা শহরে একটি অনুষ্ঠানে এসে ঘটনাটি শোনেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির, ভুমি এবং প্রাণী সম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মৃত চাষির বাড়়িতে যান। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্য যে মাত্র দু’হাজার টাকার জন্যও এক জন কৃষককে মরতে হল। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, মৃত চাষির এলাকার সমবায় সমিতিতে টাকা ছিল। মোদী সরকারের নীতির কারণেই সে টাকা তুলে চাষের কাজে লাগাতে পারেননি ওই চাষি। খেতমজুরদের মজুরি দিতে না পারায় অপমানিতও হন। সে জন্যই তিনি চরম পথ বেছে নিয়েছেন।’’ মন্ত্রী বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানিয়েছেন। রাতেই মমতা টুইটারে এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন।
স্বপনবাবুর আরও দাবি, টাকার অভাবে জেলার বহু চাষি চাষের কাজ করতে সমস্যায় পড়েছেন। মৃতের পরিবারেরও দাবি, সমবায় সমিতিতে টাকা নিতে গিয়ে একাধিক বার ফিরে আসতে হয়েছে শিবুবাবুকে। সমিতি থেকে বলা হয়েছে, নগদ নেই।
নোট-দুর্ভোগে মৃত্যু মিছিল জারি রাজ্যের অন্য প্রান্তেও। লাইনে দাঁড়ানোর ধকল সহ্য করতে না পেরে দিন কয়েক আগে দিনহাটায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। এ বার ডাকঘরে টাকা তুলতে গিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল চুঁচুড়ার এক বৃদ্ধের। নাম অনিল ঘোষ (৭৫)। তাঁর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিলবাবু জনা কুড়ি গ্রাহকের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় সেখানেই বসে পড়েন। ভর্তি করানো হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
দিনহাটার ধরণীকান্ত ভৌমিকের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ ছিল, নোট বদলের মানসিক ও শারীরিক ধকল নিতে পারেননি ধরণীকান্তবাবু। অনিলবাবুর পরিবার অবশ্য সরাসরি এই অভিযোগ করেনি। তাঁরা জানান, দিন কয়েকের মধ্যে কিছু বাতিল ৫০০ এবং এক হাজারের নোট ডাকঘরে জমা দিয়েছেন অনিলবাবু। কিছু টাকা তুলেওছেন। তাঁর পুত্রবধূ মৌমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘অবসরের পর থেকেই বাবা সব সময় টাকা-পয়সা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন।’’