মানিক শেখ।
সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টিতে আলু চাষে ক্ষতি হওয়ায় এক চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করল তাঁর পরিবার। শুক্রবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের কালনা ২ ব্লকের বড়ধামাস পঞ্চায়েতের বিরুহা গ্রামের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে মানিক শেখ (৩৮) নামে ওই চাষির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মেলার আগে, মৃত্যুর কারণ নিয়ে মুখ খোলেনি পুলিশ। বিরোধীদের দাবি, সাম্প্রতিক দুর্যোগে চাষে ক্ষতি হলেও রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা না করায়, চাষিদের হতাশা বাড়ছে। তাই এই পরিণতি।
রাজ্যের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা তথা তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষা চলছে। এর মধ্যে কী করে বলা যাবে যে, চাষে ক্ষতির জন্যই কেউ আত্মহত্যা করেছেন? শস্যবিমা করা থাকলে, ক্ষতিপূরণ মিলবে।’’ যদিও মানিকের কাকা শেখ আলিমের বক্তব্য, ‘‘জমি মানিকের বাবার নামে। তাই ও ‘কৃষকবন্ধু’, ‘কিসান ক্রেডিট কার্ড’, শস্যবিমার জন্য আবেদন করেনি।’’
দুই শিশু-সহ ছ’জনকে নিয়ে মানিকের সংসার। মানিকের পিসতুতো দাদা মহম্মদ ইয়াসিন শেখ, খুড়শ্বশুর আসরফ শেখের দাবি, ‘‘পৈতৃক বিঘা পাঁচেক জমির সঙ্গে ছ’সাত বিঘা জমি ভাগে নিয়ে ও আলু চাষ করে। মহাজনের কাছে ধার নিয়ে সার, বীজ-আলু কিনেছিল। ব্যাঙ্কে গয়না বন্ধক রেখে ৬০ হাজার টাকা ধার নেয়। বৃষ্টিতে জমির সমস্ত আলু পচে যাওয়ার মানসিক ধাক্কায় ও আত্মহত্যা করেছে।’’ এলাকার চাষি শেখ হারুন, শেখ নাজিবদের দাবি, ‘‘দুর্যোগে এলাকার বহু জমির আলু নষ্ট হয়েছে।’’ কৃষি দফতরের বক্তব্য, ব্লকের মধ্যে বড়ধামাস-সহ তিনটি পঞ্চায়েতের আলু চাষ সাম্প্রতিক দুর্যোগে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
বিজেপির কিসান মোর্চার জেলা সভাপতি আনন্দ রায়ের দাবি, ‘‘ওই দুর্যোগের পরে, রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেনি। চাষিদের হতাশা বাড়ছে। এ ঘটনা তার প্রমাণ।’’ বামপন্থী সংগঠন ‘কৃষকসভা’র রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের বক্তব্য, ‘‘ধার নিয়ে করা চাষে ক্ষতি হওয়ায় ওই চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্ত রাজ্য সরকার কি তা মানবে?’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘চাষিদের সুবিধা দিতে রাজ্য সরকারের বহু প্রকল্প রয়েছে। তার প্রচার হচ্ছে। এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে।’’