নাতনিকে খুন ঠাকুমার।—প্রতীকী চিত্র।
জন্মের দু’দিন পরে শিশুকন্যাটিকে ফেলে হাসপাতালে থেকে পালিয়ে যান মা। বাবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার কয়েক ‘ক’দিনের মধ্যেই আসছি’ বলে দায়িত্ব সারেন।
মেয়েটির জন্ম হয় গত বছর ১৯ ডিসেম্বর। সেই থেকে তার ঠিকানা ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আপাতত নার্সদের কোলেপিঠেই বড় হচ্ছে সে।
হাসপাতাল থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল প্রশাসনকে। সেখান থেকে খবর পৌঁছয় হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের কাছে। দিনকয়েক আগে মেয়েটির বাবা-মায়ের সন্ধান পান তাঁরা। হাওড়া জেলায় তাঁদের বাড়ি। রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের লোকজন গিয়েছিলেন ওই বাড়িতে। কিন্তু সেখানে এক অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’
কী ঘটেছিল? হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য সৌরভ গোস্বামী যান ওই বাড়িতে। সেখানে মেয়ের বাবা তাঁকে এই মারেন কী সেই মারেন। সৌরভ বলেন, ‘‘ওঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দুই মেয়ের পরে ফের মেয়ে হয়েছে। এর দায়িত্ব তাঁরা নিতে পারবেন না।’’ মেয়েটির বাবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে কথা বলেন তাঁর শাশুড়ি। জানান, জামাই দিনমজুরি করে সংসার চালায়। তৃতীয় সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারবে না। কিন্তু ছেলে হলে কী...? অর্ধেক শুনেই ফোন কেটে দেন মহিলা। আর ফোন তোলেননি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার রামপ্রসাদ রায় জানান, শিশুটির জন্মের পরে রাখা হয়েছিল সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে। দিন পনেরো পরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু জন্মের দু’দিন পরে হঠাৎ উধাও হয়ে যান তার মা। হাসপাতাল থেকে বাবার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি একাধিক বার জানিয়েছিলেন, ক’দিন পরে গিয়েই মেয়েকে নিয়ে আসবেন। কিন্তু কেউ আর আসেননি। এক সময়ে ফোন ধরাও বন্ধ করে দেয় পরিবারটি। এর পরেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু শিশুর এখন ঠাঁই হবে কোথায়? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আপাতত নার্সরাই দেখভাল করছেন তার। জামাকাপড়, খাবার— সবই ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিব্যি হেসেখেলে আছে সে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন? দক্ষিণ ২৪ জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে শিশুটিকে আপাতত কোনও হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। হাওড়ার জেলাশাসককে অনুরোধ করা হবে, যাতে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেন।’’
বাবা-মা কেন তাঁকে জন্মের পরে ফেলে গেল, এর পর কোথায় ঠাঁই মিলবে— এত সব অবশ্য বোঝার বয়স হয়নি মেয়ের। নার্সরা জানালেন, কেউ কোলে তুললেই হাত-পা ছুড়ে খিলখিলিয়ে একগাল হাসি তার!