Deaths

কুঁদঘাটে নিকাশিনালা দুর্ঘটনায় নিহত ৩ ভাই, মৃত এক প্রতিবেশীও, শোকস্তব্ধ মালদহের তালসুর

রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুটিয়ারিতে একটি ক্লাবের কাছে নর্দমার আবর্জনা সাফাই করার কাজ করছিলেন তাঁরা ৭ জন। বিষাক্ত গ্যাসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ওই ৪ জনকে বাঁচানো যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:২৩
Share:

শোকগ্রস্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

কুঁদঘাটে নিকাশিনালা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ৩ ভাইয়ের। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন তাঁদের এক প্রতিবেশীও। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনায় এখন শোকের ছায়া নেমেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তালসুর এলাকায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কুঁদঘাটে মৃত্যু হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের মালিওর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব তালসুরের বাসিন্দা আলমগির হোসেন (২৮), জাহাঙ্গির আলম (২৬), সাবির আলি (২৪) এবং লিয়াকত আলি (২২)-র। এক সময় পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন তিন ভাই আলমগির, জাহাঙ্গির এবং সাবির। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁরা ভিন‌্‌রাজ্য ছেড়ে নিজের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। বেশ কিছু দিন বসে থাকার পর কলকাতায় শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। সব চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু এ দিনের দুর্ঘটনা আচমকা বদলে দিল সবকিছু। রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুটিয়ারিতে এ দিন একটি ক্লাবের কাছে নর্দমার আবর্জনা সাফাই করার কাজ করছিলেন তাঁরা ৭ জন। বিষাক্ত গ্যাসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ওই ৪ জনকে বাঁচানো যায়নি।

হরিশ্চন্দ্রপুরে রেললাইনের কাছেই বাড়ি মিহতদের। বাড়ি মানে, মাটির দেওয়াল। পাটকাঠির বেড়া। আর টালির ছাউনি। অভাব তাড়িয়ে বেড়ায় নিত্যদিন। তাই ঝুঁকি থাকলেও উপায় না দেখে এই কাজ বেছে নিয়েছিলেন আলমগির, জাহাঙ্গির, সাবির এবং লিয়াকতরা। শুধু তাঁরা নন, পূর্ব তালসুরের একাধিক যুবকই এমন নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের বড়ছেলে আলমগির। তিনি বিবাহিত। রয়েছে দুই সন্তানও। তিন সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর তাঁদের বাবা তোরাব আলি। শূন্য দৃষ্টি মেলে বললেন, ‘‘সকালেই বড় ছেলেটা ফোন করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে খোঁজখবর নিয়েছিল। কিন্তু তিন ছেলেই যে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল। কী নিয়ে বাঁচব?’’

Advertisement

নিহত লিয়াকত বিয়ে করেছিলেন কিছু দিন আগে। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর বাবা মহম্মদ হানিফ এবং দাদা শাহাদাতও ভিন্‌রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে ঘন ঘন সংজ্ঞা হারাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোহিনূর বিবি। কোনও রকমে বললেন, ‘‘উনি রাতেই ফোন করে কেমন আছি খোঁজখবর নিয়েছিলেন। সেটাই যে শেষ কথা হবে বুঝতে পারিনি!’’

লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর শোক স্পর্শ করে গিয়েছে মালদহের চাঁচলকে। বেশ কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ওই সময়ে। বৃহস্পতিবারের ঘটনা সেই দুঃসহ স্মৃতিকে ফের উস্কে দিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement