কান্নায় ভেঙে পড়েছেন খাইরুলের দিদি। নিজস্ব চিত্র
ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি। কোনও ঘরে দরজা আছে। কোনওটায় নেই। জরাজীর্ণ সেই বাড়ির সামনে বসে কাঁদছেন বৃদ্ধ মহম্মদ হোদা। পাশের চেয়ারে মুখ চাপা দিয়ে বসে তাঁর স্ত্রী খালেদা বিবি, মাঝেমাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে হিংসায় জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার হয়েছেন ওই দম্পতির দুই ছেলে খাইরুল হক আর সালেদুল হক। সঙ্গে আরও চার জনকে ধরেছে সে রাজ্যের পুলিশ। সকলেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ডাঙ্গিলা বা তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দাবি করেছে, ধৃত ছ’জনই জঙ্গি সংগঠন সিমির কাছাকাছি থাকা সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত।
এই দাবি অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা মানতে চাননি। মানতে চাননি হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলমও। তিনি বলেন, ‘‘ওখানকার বিজেপি সরকারের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়! সিমি কী, পপুলার ফ্রন্ট কী— খেটে খাওয়া ওই শ্রমিকরা তার নামও জানেন কি না সন্দেহ। উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবে এ রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষদের জেলে পোরা হচ্ছে।’’
প্রায় ন’শো কিলোমিটার দূরে কাজের জন্য গিয়েছিলেন হত দরিদ্র পরিবারের ওই ছ’জন। সেই তালিকায় ডাঙ্গিয়ার খাইরুল এবং সালেদুল ছাড়াও আছেন ডাঙ্গিয়া গ্রামের সানজুর হক, সাগর আলি ও পাশের গ্রাম জনমদোলের আসলাম শেখ ও মহম্মদ শাহ আলম। সকলেরই বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তাঁদের যে পুলিশ ধরেছে, শনিবার রাতে লখনউয়ে থাকা বাকি শ্রমিকদের কাছ থেকেই বিষয়টি জানতে পারে মালদহের এই দু’টি গ্রাম। ধৃতদের এখন কী হবে, তাই নিয়ে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় সকলের। কী করে তাঁদের জামিনের ব্যবস্থা করা যায়, তা-ও ভেবে পাচ্ছেন না কেউ। কেন পুলিশ ধরল তাঁদের?
আরও পড়ুন: পড়ুুয়া বিক্ষোভে বিদায়, কিন্তু আজও যাদবপুর যাবেন, বললেন ধনখড়
ধৃত সাগর আলির আত্মীয় মহম্মদ এজদানি, বরকত আলিরা বলেন— ‘‘জমায়েত হয়েছে শুনে হোটেল থেকে ওরা একসঙ্গে সেখানে গিয়েছিল। গন্ডগোল বাধতেই লুকিয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ‘মাইকিং’ করে সবাইকে বাড়ি ফিরতে বলে। তখন রাস্তায় বার হতেই খালেদুলকে পুলিশ ধরে। বাকিরা তখন পুলিশকে গিয়ে বলে যে, তারা কিছু করেনি। কিন্তু পুলিশ বাকিদেরও গ্রেফতার করে বলেই জানিয়েছে ওখানকার অন্য শ্রমিকরা।’’
লখনউতে রয়েছেন ডাঙ্গিলার শ’দেড়েক শ্রমিক। কেউ হোটেলে, কেউ কারখানায়, কেউ বা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মহম্মদ হোদার ভাই বছর কুড়ি ধরে সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন। সেই সুবাদেই হোদার দুই ছেলে খাইরুল ও সালেদুল লখনউ যান। দু’জনে একই হোটেলে কাজ করতেন। তাঁদের সঙ্গে ওখানে কাজ করতেন সানজুর, সাগর, আসলাম ও মহম্মদ শাহ আলম। মহম্মদ হোদা বলেন, ‘‘দু’টো টাকা রোজগারের আশায় ওখানে গিয়েছে ওরা। কোনও সংগঠনের সঙ্গে ওরা জড়িত না।’’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘এখন কী করে ওদের জামিনের ব্যবস্থা করব, জানি না!’’
আরও পড়ুন: অধিকার রক্ষার দাবি, পথে আজ ফের মমতা
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয়ভাবে জানতে পেরেছি। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এখনও আমাদের সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি।’’