ফাইল ছবি
এত দিন পরিবারের জন্য রেশনে বরাদ্দ ছিল আট কেজি চাল। চলতি মাসে রেশন তুলতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন বাঁকুড়ার সিমলাপালের এক সরকারি স্কুলের শিক্ষক। বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ২১ কেজি। ডিলার জানান, শিক্ষকের পরিবার ‘অন্ত্যোদয়’ শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘‘কোন যুক্তিতে আমার পরিবারকে অন্ত্যোদয় শ্রেণিতে রাখা হল?’’ জবাব দিতে পারেননি ডিলার।
শুধু সিমলাপাল নয়, বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতে এত দিন ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১’ (আরকেএসওয়াই-১) প্রকল্পে রেশন পাওয়া অনেক উপভোক্তা রাতারাতি ‘অন্ত্যোদয়’ শ্রেণিতে ঢুকে গিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই চাকরিজীবী। বহু প্রকৃত উপভোক্তা যেখানে ‘বঞ্চিত’ সেখানে এ ধরনের ঘটনা রাজ্যে প্রশাসনের কী হাল, তার পরিচয় দিচ্ছে, কটাক্ষ বিরোধীদের। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘কী ভাবে এমন ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’
সিমলাপালের এক রেশন ডিলারের দাবি, তাঁর আওতায় এত দিন ৮৪টি ‘অন্ত্যোদয়’ পরিবার ছিল। এ মাসে আরও ৭৫টি পরিবার ওই শ্রেণিতে এসেছে। তাতে অনেক সরকারি চাকুরিজীবীর পরিবার রয়েছে। সারেঙ্গার রেশন ডিলার স্বপন পাত্র জানান, এ মাসে তাঁর আওতায় নতুন শ’পাঁচেক পরিবার অন্ত্যোদয় শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। রাইপুরের ডিলার রবীন্দ্রনাথ দত্ত, রানিবাঁধের ডিলার রাধেশ্যাম মাহাতোদের দাবি, ‘‘কোনও সমীক্ষা ছাড়া, কী ভাবে আরকেএসওয়াই-১ থেকে অন্ত্যোদয় শ্রেণিভুক্ত হলেন, প্রশ্ন তুলছেন উপভোক্তারা। অনেকে বাড়তি রেশন-সামগ্রী নিতেও চাইছেন না।’’ সিমলাপালের বাসিন্দা রাজ্য পুলিশের এক কর্মীর তেমনই ‘শ্রেণি বদল’ হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “এখন রেশনের ওই বাড়তি জিনিস নিলে পরে, যদি সমস্যায় পড়ি, সে আশঙ্কায় নিচ্ছি না।’’
২০১২ সালের আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার ভিত্তিতে গ্রাহকদের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় ‘অন্ত্যোদয়’, ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত’ ও ‘বিশেষ’ পরিবারে ভাগ করে রেশন দেওয়া হয়। এর বাইরে থাকা পরিবারগুলিকে ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা’য় দু’টি ভাগে রেশন দেওয়া হয়। আচমকা অনেক পরিবার ‘অন্ত্যোদয়’ শ্রেণিভুক্ত হওয়ায়, শোরগোল পড়েছে প্রশাসনের অন্দরেও। বাঁকুড়ার খাদ্য নিয়ামক শেখ আলিমুদ্দিন শুধু বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকের বেশ কিছু পরিবার নতুন করে অন্ত্যোদয় শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। রাজ্যের কাছে সে তালিকা চেয়েছি।’’ রাজ্য খাদ্য দফতরের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘সদস্য বেশি, এমন কিছু পরিবারের সুবিধার কথা ভেবেই অন্ত্যোদয়ে স্থানান্তর
করা হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের প্রশ্ন, ‘‘যাঁদের প্রকৃত অর্থে অন্ত্যোদয় প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার কথা, তাঁদের অনেকে বঞ্চিত। আর কিছু মানুষকে সে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অনৈতিক কাজ। প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ খাদ্যমন্ত্রীর অবশ্য আশ্বাস, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।