ফালাকাটার পুরপ্রধান প্রদীপ মুহুরি। —ফাইল চিত্র।
ছিল পঞ্চায়েত। হয়ে গেল পুরসভা। কিন্তু এখনও সেই পুরসভার স্থায়ী ভবন নেই। নেই একজন পূর্ণ সময়ের ইঞ্জিনিয়ারও। এ হেন পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে চাপ সামলাতে পারছেন না পুরপ্রধান। চেয়ারম্যানের ধারণা, এই অতিরিক্ত চাপেই সম্প্রতি তাঁর ব্লাড সুগার এবং রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে তাই দায়িত্ব ছাড়তে চাইলেন আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা পুরসভার পুরপ্রধান প্রদীপ মুহুরি। প্রতিলিপি দিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি তথা সদ্য রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া প্রকাশ চিক বরাইককে। রবিবার অবশ্য একটি অনুষ্ঠানের মধ্যেই প্রদীপকে মৌখিক ভাবে জেলা সভাপতি প্রকাশ বলেছেন, দল সমস্যার কথা শুনবে। সমাধানেরও চেষ্টা করা হবে। তবে তিনি যেন পদ না-ছাড়েন। আনন্দবাজার অললাইনকে ফালাকাটার পুরপ্রধান জানিয়েছেন, তিনি দলের সঙ্গে কথা বলেই যা করার করতে চান।
প্রদীপ একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। সাইকেল নিয়েই ঘুরে বেড়ান নিজের পুর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ড। কিন্তু এলাকায় ‘স়ৎ মাস্টার’ হিসাবে পরিচিত প্রদীপ তাঁর ‘হতাশার’ কথা গোপন করলেন না। জানালেন অনেক ‘নেই’-এর কথা। এ-ও জানালেন, মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না-করতে পেরেই তাঁর সুগার বেড়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে যে দুয়ারে সরকার শিবির হল, সেখানেই আমি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছিলাম। দেখা গেল আমার সুগার ৩৫০ হয়ে গিয়েছে। প্রেসার বেড়েছে। এ সব আমার কোনও দিন ছিল না।’’
বেশি দিন হয়নি পঞ্চায়েত থেকে ফালাকাটাকে পুর এলাকা করা হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোট হয়েছিল। প্রথম ভোটে ১৮-০ ব্যবধানে পুরসভা দখল করে তৃণমূল। প্রদীপকে চেয়ারম্যান করে শাসকদল। কিন্তু এখনও নেই স্থায়ী ভবন। আগের পঞ্চায়েত অফিসেই চলছে পুরসভার কাজ। সেই পঞ্চায়েতের ২১ জন অস্থায়ী কর্মীই পুরসভার কাজ চালাচ্ছেন। আক্ষেপের সুরে প্রদীপ বললেন, ‘‘ওঁদের দু’একজন বাদ দিয়ে কেউ কাজ জানেন না। আমাকে টাইপ পর্যন্ত করতে হয়। এত চাপ সইতে না-পেরেই আমি দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলাম।’’
চেয়ারম্যান প্রদীপকে প্রশ্ন করা হয়, পরিকাঠামো না-তৈরি করে পুরসভা ঘোষণা করে দেওয়া কি প্রশাসনিক ভাবে কিছুটা তাড়াহুড়ো হয়েছে বলে মনে করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সেটা আমি বলছি না। তবে, ন্যূনতম একটা পরিকাঠামো তো লাগে! এক জন স্থায়ী ইঞ্জিনিয়ারের তো প্রয়োজন।’’ তিনি জানিয়েছেন, এখন কোচবিহার থেকে এক জন ইঞ্জিনিয়ার সপ্তাহে তিন দিন আসেন।
আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি। উনি শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েছেন। বলেছি, সব সমস্যা আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। চেয়ারম্যান ইস্তফাপত্র তুলে নেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’’
একই কথা বললেন প্রদীপও। পদ ছাড়তে চেয়ে দলকে চিঠি দিলেও ফালাকাটার পুরপ্রধান জানিয়েছেন, তিনি দলের অনুগত সৈনিক। দল যখন বলেছে, তখন কথা বলেই সমস্যা সমাধানের দিকে এগোতে চান তিনি।