কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা। —নিজস্ব চিত্র।
সবে মাত্র নমাজ শেষ করে উঠেছি। আচমকাই বিকট শব্দ! এমন শব্দ সত্যিই আগে শুনিনি। আর ছুটে এসে যা দেখেছি, নিজের চোখকেই বিশ্বাস পারছিলাম না। বীভৎস অবস্থা! দেখলাম, একটা মালগাড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন দিক থেকে এমন জোরে ধাক্কা মেরেছে যে, এক্সপ্রেসের একটা বগিটা উপরের দিকে উঠে রীতিমতো ঝুলছে। আরও দুটো বগি লাইনচ্যুত হয়ে দু’পাশে পড়ে রয়েছে। চারদিক থেকে তখন শুধু ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। আর কান্নার শব্দ!
রোজ মোটামুটি সকাল ৮টা নাগাদই এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা যায়। আজ ওই সময়েই ঘটনাটা ঘটেছে। পাশেই নির্মলজোত গ্রামে থাকি। তখন মেরেকেটে সকাল ৮টা বেজে ৫ মিনিট। সময়টা মনে আছে, কারণ তখনই নমাজ শেষ হয়েছে। তখনই বিকট শব্দটা কানে আনে। মনে হল যেন, গোটা গ্রাম কেঁপে উঠল! ওই আওয়াজ শুনেই বেরিয়ে এসেছিল অনেকে। আওয়াজটা রেললাইন থেকে এসেছে বুঝতে পেরেই আমরা কয়েক জন ওই দিকে ছুট দিই। গিয়ে দেখি ওই অবস্থা! গত বছর ওড়িশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার খবর টিভিতে দেখেছিলাম। আঁতকে উঠেছিলাম সেই সব দৃশ্য দেখে। ওই মৃত্যুমিছিল দেখে হাড়হিম হয়ে গিয়েছিল। এ বার যেন নিজের চোখে সেই ছবি দেখলাম।
দেরি না করে আমরা উদ্ধারকাজে নেমে গিয়েছিলাম। কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ আর কিছু অ্যাম্বুল্যান্স আসে। আমার চোখের সামনেই এক জন মারা গেল! লাইনে উল্টে থাকা একটা বগিতে এক জন আটকে ছিল। তাকে কোনও ক্রমে টেনে বার করতে না-করতেই মরে গেল! আমরাই সাত-আট জনের দেহ উদ্ধার করেছি। ৩০-৩৫ জন জখম হয়েছিল। অনেক বাচ্চা, মহিলা ছিল। তাদের বার করে হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছি। অত অ্যাম্বুল্যান্স ছিল না। অনেকের প্রাইভেট গাড়িতেও আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেককে তো আমার বাড়িতেও নিয়ে গিয়েছি।
আমাদের আজ কুরবানির দিন। কিন্তু আজ আর সে সব করলাম না। চোখের সামনে যা ঘটল, তার পর আর কিছু করা যায় না। যা করার কাল করব...।