—ফাইল চিত্র
পরিচয় বদলেছে বার বার। নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতারও হাতবদল হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আইআইইএসটি বা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি হওয়ার আগে পর্যন্ত শিবপুরের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আইআইইএসটি হওয়ার পরে সেটি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। রাজ্যের আওতায় থাকাকালীন যে-সব শিক্ষক, কর্মচারী অবসর নিয়েছেন, এখন বিভিন্ন প্রাপ্য পেতে তাঁদের নাজেহাল হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
শিবপুর বিই কলেজ, বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)— এই পরিচয়ে ওই প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজ্য সরকারের আওতায় ছিল। ২০১৪ সালে সেটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। তার আগে যাঁরা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নিয়েছেন, এখন বিপাকে পড়েছেন মূলত তাঁরাই। এমনই এক জন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অশোক মৈত্র অবসর নেন ২০১২-য়। শুক্রবার তিনি জানান, রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়েই ওখানে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু শতবর্ষ-প্রাচীন ওই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রের অধীনে চলে যাওয়ায় তাঁরা খুবই অসুবিধায় পড়েছেন। রাজ্য সরকারের নিয়ম— যে-দফতর বা সংস্থা অথবা প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মীরা অবসর নেন, মেডিক্যাল, পারিবারিক পেনশন বা অন্য প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্তদের আবেদন করতে হয় সেখানেই।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘এখন তো আমার ওই পুরনো কর্মস্থল কেন্দ্রের আওতায়। যা কিছু আবেদন, ফাইল আইআইইএসটি-র রিসিভিং সেকশনে জমা দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের তো এ নিয়ে কোনও দায় নেই।’’ অশোকবাবু ২০১৯ সালে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও চিঠি লেখেন। ওই সব কাজ দেখার জন্য হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের এক জন অ্যাকাউন্টস অফিসার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু কাজ খুব দ্রুত এগোচ্ছে না বলে অশোকবাবুর অভিযোগ।
এই সমস্যা মূলত ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্তদের। অশোকবাবু রাজ্যের পূর্বতন উচ্চ শিক্ষাসচিব বিবেক কুমারকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও টুইট করেছেন। অবসরপ্রাপ্তদের দাবি, তাঁদের বয়স বাড়ছে, শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা কমছে। তাঁদের এই বিষয়গুলি সরাসরি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে ভাল হয়। কারণ, শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাগজপত্রের গন্তব্য বিকাশ ভবনই।
২০১৩ সালে অবসর নিয়েছেন অরবিন্দ রায়। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকশন বিভাগের এই প্রাক্তন শিক্ষকেরও অভিযোগ, অবসরকালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। ‘‘যদি আমাদের বিষয়গুলি নিয়ে সরাসরি উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করার নিয়ম থাকত, তা হলে খুবই ভাল হত,’’ বলেন অরবিন্দবাবু। তাঁরও আগে, ২০১২-য় অবসর নেন দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের এই প্রাক্তন শিক্ষকও অশোকবাবু এবং অরবিন্দবাবুর সঙ্গে একমত।
এই অবসরপ্রাপ্তেরা যে অসুবিধায় পড়ছেন, আইআইইএসটি-র রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের এক জন অ্যাকাউন্টস অফিসার ওঁদের যাবতীয় বিষয় দেখে রাজ্য সরকার নিযুক্ত এক জন স্পেশাল অফিসারের কাছে পাঠান। সেখান থেকে তা যায় রাজ্যের পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগে। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর গতিতে হয়। যা করোনার এই আবহে আরও ধীরে চলছে।’’ পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে হলে এই অবসরপ্রাপ্তেরা অনেকটা স্বস্তি পেতেন বলে মনে করেন বিমানবাবুও।