মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে এই মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। —নিজস্ব চিত্র।
এক বৃদ্ধা রোগীকে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠল মালদহের এক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গোটা ঘটনায় যে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশাকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে, সে দাবি করেছেন জেলার সিপিএম এবং বিজেপি নেতৃত্ব।
শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় তাহেরুন্নেসা বেগম নামে বছর সত্তরের এক মহিলাকে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। বয়সজনিত কারণে বেশ কয়েক মাস ধরেই ভুগছিলেন তিনি। পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথায় তাঁর কাহিল অবস্থা। মানিকচকের ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে বৃদ্ধাকে স্যালাইন ও অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সেই ডি-৫ স্যালাইন ব্যবহারের শেষ তারিখ ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের। অর্থাৎ প্রায় ছয় মাস আগেই স্যালাইন ব্যবহারের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে।
রোগীর পরিবারের আরও অভিযোগ, বৃদ্ধাকে স্যালাইন দেওয়ার পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সে সময় সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা লক্ষ করেন যে স্যালাইনের ব্যবহারের শেষ তারিখ মাস ছয়েক আগেকার।
এই ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসককে অভিযোগ জানান রোগীর পরিবার। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন মানিকচকের বিএমওএইচ অভীকশঙ্কর কুমার। মেয়াদ পেরোনো স্যালাইন যাতে দেহে বিষক্রিয়া ঘটাতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন চিকিৎসকেরা। তবুও বৃদ্ধার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর পর তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
এই ঘটনায় মানিকচকের বিএমওএইচকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা। তিনি বলেন, ‘‘মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়া হলে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। রোগীর বাড়ির লোকজনদের থেকে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
গোটা ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বাম এবং বিজেপি। সিপিএমের জেলা নেতা শ্যামল বসাকের অভিযোগ, ‘‘গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী হাল, গত কাল (সোমবার) তা দেখিয়ে দিল মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতাল। স্বাস্থ্যকর্মীর নামে যাঁদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে, তাঁদের আদৌ ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে কি না, জানি না। কর্তব্যরত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলায় এক রোগীর প্রাণও যেতে পারত। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এর তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’’ অন্য দিকে, বিজেপি জেলা নেতা গৌরচন্দ্র মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা যে মুখ থুবড়ে পড়েছে তার একটি উদাহরণ হল এই ঘটনা। আগেও এ রকম অভিযোগ পেয়েছি। এই হাসপাতালে একটা চক্র সক্রিয়। সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি হচ্ছে। যাঁরা সরকারি হাসপাতালে আসেন, তাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়। এই ঘটনার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করছি।’’ যদিও মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমি কোনও অভিযোগ পায়নি। বিষয়টা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’