Containment Zone

কন্টেনমেন্ট জ়োনের ধারণা বদলের পক্ষে সওয়াল

কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ চিহ্নিত করার পদ্ধতি কতটা ঠিক, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫০
Share:

ঘেরাটোপ: আলিপুরের বর্ধমান রোডের একটি কন্টেনমেন্ট জ়োনের সামনে পুলিশি ব্যারিকেড। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কোথাও আবাসন বা বাড়িকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, কোথাও বা বাঁশ দিয়ে রাস্তা ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ চিহ্নিত করার পদ্ধতি কতটা ঠিক, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement

কারণ, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিবার বা আবাসনের বাসিন্দাদের একঘরে করে দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে অন্যদের মধ্যে। আতঙ্কের মাত্রাও বাড়ছে। কিন্তু যেখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে কাউকে ব্রাত্য করে নয়, বরং আরও বেশি করে মানুষের অংশগ্রহণ (কমিউনিটি পার্টিসিপেশন) দরকার বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এমনকি, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক ‘কন্টেনমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’-তেও আলাদা করে ‘কমিউনিটি ইনভলভমেন্ট’ বা কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি আগের ‘স্ট্র্যাটেজি’-তে ছিল না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কেন্দ্রীয় সরকারের এক কর্তার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী কন্টেনমেন্ট জ়োনের পদ্ধতিতে বদল আনা হচ্ছে।’’

কেন এই বদলের প্রয়োজন?

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে সংক্রমণের প্রবাহরেখাকে (চেন অব ট্রান্সমিশন) আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। গোষ্ঠী সংক্রমণই এর কারণ। এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘একটি বাড়ি বা আবাসন বা রাস্তাকে চিহ্নিত করে এখন সংক্রমণ রোখা যাবে না। উপরন্তু সেই বাড়ি বা আবাসন নিয়ে অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে। এমনিতেই করোনা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে অনেক মানুষের মধ্যেই। আতঙ্ক নয়, সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে প্রতিরোধে যুক্ত করতে হবে।’’ কারণ, সংক্রমণজনিত রোগের ইতিহাস দেখিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে যদি জনসাধারণকে প্রতিরোধে শামিল না-করা যায়, তা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যত দিন লকডাউন ছিল এবং যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত ছিল, তত দিন কন্টেনমেন্ট জ়োন চিহ্নিত করার মানে ছিল। যখন আনলক পর্ব ও গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে, তখন আলাদা করে কোনও জায়গাকে চিহ্নিত করার প্রয়োজন নেই।’’

চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে প্রয়োজন কমিউনিটি পার্টিসিপেশন। কাউকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে নয়, একসঙ্গেই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে।’’ সে ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এলাকার জনপ্রতিনিধি বা প্রভাবশালী ব্যক্তি, অর্থাৎ যাঁদের কথা সবাই শোনেন তাঁদেরকে যুক্ত করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, শহরে তবু এক রকম অবস্থা, কিন্তু গ্রামে যেখানে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেখানে কোনও বাড়িকে চিহ্নিত করলে যে সমস্যা হচ্ছে তার একাধিক উদাহরণ এ রাজ্যে দেখা গিয়েছে। নানা ভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে সেই পরিবারকে।

শুধু হেনস্থা আটকাতে নয়, তথ্যে স্বচ্ছতার জন্যও কন্টেনমেন্ট জ়োনের ধারণায় পরিবর্তন দরকার বলে মত বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের। তাঁদের বক্তব্য, যদি কন্টেনমেন্ট জ়োন করতেই হয়, তা হলে নির্দিষ্ট বাড়ি, আবাসন বা রাস্তা নয়, পুরো এলাকাকেই করা প্রয়োজন কি না, সেটা ভাবা দরকার। কারণ, যখনই নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা হবে, তখনই তথ্য লুকোনোর প্রবণতা তৈরি হবে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলেও আর প্রকাশ করতে চাইবেন না। ফলে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়বে। এক সরকারি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘যে কোনও সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধেই তথ্যের স্বচ্ছতা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা সম্ভব শুধু জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কুণালকান্তি মজুমদারের কথায়, ‘‘এমনিতেই মানুষের বড় অংশ ভয়ে রয়েছেন। সেখানে কোনও বাড়ি বা রাস্তাকে চিহ্নিত করলে তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ তৈরি হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement