প্রতীকী ছবি।
হাজারো হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও মহোৎসবে বেপরোয়া মাতনের পরিণামে শুধু যে করোনার সংক্রমণই ফের বাড়ছে তা নয়, বেড়ে চলেছে প্রাণহানিও। এই অবস্থায় রাজ্যে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিধি শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, সেটা বাঞ্ছনীয়ও নয়। কারণ, শ্যামাপুজোর মুখে রাশ আলগা করলে বিপদ মাত্রা ছাড়াতে সময় নেবে না। কঠোর ভাবে নিয়মবিধি আরোপ এবং বাজি বন্ধের পক্ষেই সওয়াল করছেন তাঁরা।
প্রশাসনিক শিবিরের অভিযোগ, পুজোয় নিয়ন্ত্রণ বিধিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে জনতরঙ্গের রাস্তায় নেমে পড়াটাই সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এই অবস্থায় লাগামে ঢিলে দেওয়া তো দূরের কথা, কালীপুজোয় সরকার আলাদা কোনও আচরণবিধি স্থির করে দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও বার্তা জেলা প্রশাসনের কাছে যায়নি।
নিয়ন্ত্রণ বিধি যে অক্টোবর জুড়ে বলবৎ থাকবে, সেপ্টেম্বরের শেষেই সরকার তা জানিয়েছিল। তবে পুজোর জন্য ১০-২০ অক্টোবর নৈশ নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়। বার-রেস্তরাঁ খোলা রাখা হয়েছিল স্বাভাবিক সময়ের মতোই। চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই নিয়মশৈথিল্যের জেরে গত সাত দিনে রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৮৪৬, ৯৭৪, ৯৮৯, ৮০৫, ৮০৬, ৯৭৬। সংখ্যাটা বৃহস্পতিবার বেড়ে হয়েছে ৯৯০। এ দিনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি কলকাতাতেই— ২৭৫।
অনেকে মনে করছেন, সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিধির মেয়াদ ফের বাড়ানো হবে। কালীপুজোর আগে নিয়ন্ত্রণ বিধির যথাযথ প্রয়োগ না-হলে শীতের মুখে কোভিড পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে, সেই প্রশ্নও তুলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে।
পুজোর মাসে (পুজোর ১০ দিন বাদে) নিয়ন্ত্রণ বিধি জারি থাকলেও তা যে যথাযথ ভাবে মানা হয়নি, তা জানেন সকলেই। গা-ছাড়া মনোভাব আগের থেকে যে অনেক বেড়েছে, সেই বিষয়েও দ্বিমত নেই। এর মধ্যে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কয়েক বার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে কঠোর ভাবে বিধি প্রয়োগের উপরে জোর দিয়েছিলেন। নৈশ নিয়ন্ত্রণ বিধি যাতে ঠিকমতো প্রয়োগ করা হয়, সেই ব্যাপারেও সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল তাঁর। জেলাভিত্তিক কন্টেনমেন্ট বা মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন চিহ্নিত করার ব্যবস্থা আবার চালু করতে হয়েছে প্রশাসনকে। কিন্তু অনেক জেলা প্রশাসনই জানাচ্ছে, সেই কন্টেনমেন্ট পদ্ধতিও যে আগের মতো কঠোর ভাবে মানা হচ্ছে, তা নয়।
তাই সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, শীতের মুখে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন না-করলে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। টিকা আসার পর থেকে মানুষের মধ্যে যে-বেপরোয়া মনোভাব দেখা গিয়েছে, তা কাটাতে সরকারকে কঠোরতর অবস্থান নিতে হবে। শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, “হিসেব মিলিয়ে বিজয়া দশমীর সাত দিন পর থেকেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পারে সংক্রমণ। মৃত্যুহার বাড়ার ইঙ্গিতও মিলছে।” সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্তের বক্তব্য, আংশিক ভাবে কড়া নিয়ন্ত্রণ বিধি চাপিয়ে সংক্রমণ রোখার কাজ চালিয়ে যাওয়া জরুরি। পুজোয় সব বিধিই ব্যর্থ হয়েছে। কালীপুজোর আগে আরও কড়া হওয়া দরকার প্রশাসনের। শীতে শ্বাসজনিত রোগব্যাধি এমনিতেই বাড়ে। তার উপরে করোনা। স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সঙ্গে বাজি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কড়া অবস্থান নিতেই হবে।