ফাইল চিত্র।
আচমকা একটা হালকা শব্দ শুরু হয়ে ক্রমে কান-মাথা কাঁপিয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। গত ৪৮ ঘণ্টায় আমাদের এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এটাই যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিককে সতর্ক করার বার্তা, সাইরেন। পরিচয় হয়ে গেল বাঙ্কারের সঙ্গেও।
আমাদের জ়্যাপরজিয়া শহরে শুক্রবার পর্যন্ত বোমা-গুলির আঁচ কিছু ছিল না। কিন্তু শনিবার তো বেশ কয়েক বার সাইরেনটা বেজেছে। আর তখনই আমরা বন্ধুরা সতর্ক হয়েছি। বার দুই বাঙ্কারে চলে গিয়েছি। শনিবার ভোররাতে এক বার বাজল। তখন চারটে-সওয়া চারটে হবে। ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ঠিকই তবে সারা দিনের ক্লান্তিতে আর উঠতে পারিনি। তাই বুঝতে পারিনি, বাইরে তখন ঠিক কী পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু সকাল ১০টা নাগাদ ফের সাইরেনের শব্দ কানে আসতেই আমরা ঝটপট তৈরি হয়েছিলাম। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে মিনিট দশেক হেঁটে চলে গিয়েছিলাম ইউনিভার্সিটি বিল্ডিংয়ে তৈরি ‘বাঙ্কার’-এ।
‘বাঙ্কার’ আমাদের ইউনিভার্সিটির একেবারে ‘বেসমেন্ট ফ্লোরে’ যে বড় স্টোর রুম রয়েছে সেই জায়গায়। শনিবার তো বার দুই-তিন সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করেছি। আজ সকাল থেকে বার কয়েক গুলি আর বোমার শব্দ কানে এসেছে। তবে মনে হয়েছে, সেগুলি কাছাকাছি কিছু নয়। কোন দিকে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না।
আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হল। ও ১০-১২ কিলোমিটার দূরে থাকে। ও বলছিল, বোমা পড়তে দেখেছে। আর সাধারণ ইউক্রেনীয় কিছু মানুষকে সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় দেখেছে।
শনিবার বিকেলে আমরা বাঙ্কার থেকে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছি। আমার সঙ্গে কেরল, কর্নাটক আর তেলঙ্গানার তিন বন্ধুও আছে। সবাই এখানে ডাক্তারি পড়তে এসেছে। ঘরে ফেরার আগে বাজারে একটু দাঁড়িয়ে কিছুটা শুকনো খাবার নিয়ে নিচ্ছি। জল, দই, পাউরুটি আর টুকটাক জিনিসপত্র। জল এখনও আছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রিত। এখন খাওয়া- দাওয়া নিয়ে ভাবার সময় নেই। কাল রাতেও তো ভাত আর তরকারি। নিজেরাই বানিয়ে নিলাম।
রাতে আলো জ্বালতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও বাড়িতে, রাস্তায় সে ভাবে আলো জ্বালা যাবে না। তাড়াতাড়ি অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যেতে হবে।
কলকাতার বাড়িতে মা-বাবাও চিন্তা করছেন। বার বার যোগাযোগ রাখছি। কেমন আছি, কী পরিস্থিতি তা জানিয়ে রাখছি। আপাতত সাবধানে থেকে অপেক্ষায় আছি, ভারতীয় দূতাবাস থেকে কখন দেশে ফেরানো হয় তার।
লেখক জ়্যাপরোজিয়ায় পাঠরত ডাক্তারি ছাত্র