যত খুশি বিয়ার তুলতে পারবেন না বিক্রেতারা। প্রতীকী চিত্র
চৈত্রের শেষবেলায় কলকাতায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় জেলায় আরও বেশি। আর এক দিন পরে বৈশাখ শুরু। আবহাওয়া দফতর কোনও আশার বাণী শোনাচ্ছে না। উল্টে বলছে, বৈশাখে গরম আরও বাড়বে। কালবৈশাখী আসবে কি না, তারও ঠিক নেই। উপায় একটাই ছিল। বিয়ার সেবন এবং গলা ও শরীর ঠান্ডা রাখা।
কিন্তু সে বিয়ারেও বালি! কারণ, রাজ্য জুড়ে বিয়ারের আকাল দেখা দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যতটা চাহিদা, ততটা জোগান নেই। আর সেটা সামাল দিতেই বিয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে রেশন চালু করল রাজ্য আবগারি দফতর। ঠিক হয়েছে এক বছর আগে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে যে দোকান থেকে যত পরিমাণে বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, এখন ঠিক ততটাই সরবরাহ হবে। এর একটা নীতিও ঠিক করেছে আবগারি দফতর।
চাহিদা অনুযায়ী, রাজ্যে বিয়ারের পর্যাপ্ত উৎপাদন নেই বলে আবগারি দফতর দাবি করলেও বিক্রেতারা অন্য অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, আবগারি দফতরের পর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। সে কারণেই জেলায় জেলায় দোকানে বিয়ার বাড়ন্ত। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য আবগারি দফতরের কমিশনার এস উমাশঙ্কর। জোগানের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদন কম হওয়াতেই কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাধারণ ভাবে গরমে চাহিদা মেটাতে বিয়ারের উৎপাদন শুরু হয়ে যায় জানুয়ারি থেকেই। কিন্তু ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে সেই সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বার বিয়ারের চাহিদাও বেশি। দাম কমে যাওয়াতেও বেড়েছে চাহিদা।’’
চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় বিয়ারের কালোবাজারি শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়। আবগারি দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, মার্চ মাস থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছিল। যে সব বিক্রেতাদের আর্থিক ক্ষমতা বেশি, তারা অনলাইনে একসঙ্গে অনেক বিয়ার তুলে নিচ্ছিলেন। এর ফলে অন্য দোকানদারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। উমাশঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে সমান হিসেবে দেখার জন্যই একটা ব্যবস্থা তৈরি করেছি। ঠিক হয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে যে দোকান থেকে যতটা পরিমাণে বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, তার উপরেই নির্ভর করবে এই বছরের সরবরাহ।’’
আবগারি দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, গত ৮ এপ্রিল থেকে বিয়ারের ‘রেশন’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে রাজ্যে। ২০২১ সালের বিক্রির পরিমাণ অনুযায়ী বিক্রেতাদের ‘র্যাঙ্কিং’ দেওয়া হয়েছে। সেই ‘র্যাঙ্কিং’ অনুযায়ী বরাদ্দ হচ্ছে বিয়ার। ‘র্যাঙ্কিং’ শুরু হয়েছে ০.০১ থেকে। ০.০১ ‘র্যাঙ্কিং’ যে দোকানের, সেখানে সপ্তাহে ৫ কেস করে বিয়ার যাবে। ০.০২ হলে সপ্তাহে ১০ কেস। এই ভাবে বাড়তে বাড়তে একের উপর ‘র্যাঙ্কিং’ হলে মিলবে সপ্তাহে ১২০ কেস। কলকাতার এক বিয়ার বিক্রেতা জানিয়েছেন, তাঁর দোকানের ‘র্যাঙ্কিং’ ২.৭০ হওয়ায় বরাদ্দ হয়েছে সপ্তাহে ২৫০ বোতল। প্রসঙ্গত ৩৩০ মিলিলিটারের বিয়ারের ২৪টি বোতল থাকে একটি কেসে। ৫০০ মিলিলিটারের বোতল হলে ২০টি এবং ৬৫০ মিলিলিটারের ক্যান হলে এক কেসে ১২টি থাকে।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন বিয়ার কত কেস নেবেন সেটা সংশ্লিষ্ট দোকান বেছে নিতে পারবে। কত দিন চলবে এই ব্যবস্থা? জানা গিয়েছে, যত দিন না পর্যাপ্ত উৎপাদন না হচ্ছে তত দিন এই ব্যবস্থা চলতে থাকবে। কিন্তু উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বাড়তে থাকলে গোটা গরমে চালুই থাকতে পারে ‘রেশন’ ব্যবস্থা। তবে এই ব্যবস্থা নিয়েও বিক্রেতাদের অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে। এক মদ বিক্রেতার বক্তব্য, ‘‘আবগারি দফতর বিয়ার সরবরাহে রেশন করলেও সুরাপ্রেমীরা তো আর সেটা মানবেন না। কেউ কেউ বেশি করে তুলে নেবেন আর অনেককে ফিরিয়ে দিতে হবে। পারদ চড়লে তেষ্টাও বাড়বে। আর গরমে বিয়ার দিতে না পারলে ক্রেতা হারানোর ক্ষতিটা তো আমাদেরই।’’