পরীক্ষা নেবে বলে চার বছরে তারা প্রায় ১৫ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়েছে সরকারের থেকে। কিন্তু নবান্ন হিসাব পেয়েছে মাত্র কয়েক লক্ষের। এর পরেও দেড় হাজার শূন্য পদে নিয়োগের পরীক্ষা নিতে রাজ্যের কাছে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছে স্টাফ সিলেকশন কমিশন (এসএসসি)। নবান্নের কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, অগ্রিমের হিসেব না পেলে আর একটি পয়সাও দেওয়া হবে না। এসএসসি-ও অবশ্য পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অগ্রিম না পেলে তারা পরীক্ষা নিতে পারবে না।
গোটা ঘটনায় দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, গোপনীয়তা রক্ষার যে যুক্তি দেখিয়ে এসএসসি কর্তৃপক্ষ হিসেব দিচ্ছেন না, তা ধোপে টেকে না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য আরও কয়েকটি সংস্থা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করে। নিয়ম মেনে তারা সরকারের থেকে অগ্রিম নেয়। তার পর সেই টাকার হিসেব বা ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট ভাউচার’ জমা দেয়। তা হলে এসএসসি-র হিসেব দিতে অসুবিধে কোথায়! এখানেই দুর্নীতি বা বড়সড় অনিয়মের ছায়া দেখছেন নবান্নের কর্তারা।
বাম আমলে রাজ্যে সরকারি নিয়োগের যাবতীয় পরীক্ষা নিত পিএসসি। পালাবদলের পরে ২০১২ সালে এসএসসি তৈরি হয়। ঠিক হয়, ডব্লিউবিসিএস-এ নিয়োগ করবে পিএসসি এবং সরকারের গ্রুপ বি এবং গ্রুপ সি পদে নিয়োগের পরীক্ষা নেবে এসএসসি। গ্রুপ-ডি নিয়োগের জন্য আরও একটি বোর্ড তৈরি করে সরকার। এসএসসি সূত্রে খবর, জন্মের পর গত চার বছরে বিভিন্ন পদে পাঁচটি পরীক্ষা নিয়েছে তারা। সেই কারণেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে।
অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, অগ্রিম নিলে ৬০ দিনের মধ্যে খরচের বিস্তারিত হিসেব জমা দিতে হয়। তা না পারলে অর্থ দফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে কিছু সময় চেয়ে নিতে হয়। এসএসসি কর্তারা সে সবের ধার ধারেননি। এমনকী হিসেব চেয়ে সরকারের তাগাদাতেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি। সমস্যার সমাধান বার করতে সম্প্রতি নবান্নে এসএসসি-র চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের সচিব মনোজ অগ্রবালও। বৈঠকে রাজেন্দ্রবাবুর কাছে খরচের বিস্তারিত হিসেব চাওয়া হয়। তিনি জানিয়ে দেন, গোপনীয়তার কারণে তা দেওয়া সম্ভব নয়। আর সরকার যদি ফের অগ্রিম না দেয়, তা হলে ১১০০ লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং শ’পাঁচেক কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে দিতে হবে।
নবান্নের বক্তব্য, রাজ্যের বাজেট থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ছাপা হয় সরকারের সরস্বতী প্রেস থেকে। পিএসসি-ও তাই করে। এরা সকলে অর্থ দফতর ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের দফতরে খরচের বিস্তারিত তথ্য পাঠায়। এটাই নিয়ম। এতে কোনও দিন গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হয়নি। তা হলে এসএসসি-র কর্তাদের তা করতে আপত্তি কেন?
এ নিয়ে এসএসসি-র চেয়ারম্যান কিছু না বললেও মুখ খুলেছেন নবান্নের কর্তারা। সূত্রের খবর, সরস্বতী প্রেস নয়, এসএসসি-র প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে আসছে বাইরের রাজ্যের প্রেস থেকে। এই কারণেই গোপনীয়তার তত্ত্ব সামনে এনে এসএসসি খরচের ভাউচার দিতে চাইছে না বলে নবান্নের কর্তাদের অভিযোগ। অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, পিএসসি-তে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে ওএমআর শিট তৈরির জন্য খরচের মাত্রা ঠিক করে দেওয়া আছে। অভিযোগ, দরপত্র ছাড়াই ভিন্ রাজ্যের ওই সংস্থাকে প্রশ্নপত্র ছাপতে দেওয়া হয়েছে।
এসএসসি-র চেয়ারম্যান অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবিত নন। প্রশ্ন করা হলে রাজেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘ভাউচার কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল। সে সব মিটে গিয়েছে। আমরা সব জমা দিয়ে দেব।’’ এত দিন কেন দেননি? প্রবীণ ওই আইএএস অফিসারের জবাব, ‘‘প্রশ্নপত্রের ভাউচার কী ভাবে তৈরি করতে হয়, জানা ছিল না।’’