হলদি নদীর তীরে মৃত শুশুক।
হলদিয়ার টাউনশিপের হলদি নদীর তীরে এবং মহিষাদলের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক মাসে একাধিক ডলফিন ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে। মহিষাদলের গেঁওখালি এলাকায় ভেসে আসা একটি ডলফিনের মাংস কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগও উঠেছে। তার উপর গত ২৭ জানুয়ারি হলদিয়ার টাউনশিপেই নদীর ধারে মৃত ডলফিন পড়ে থাকার ঘটনায় পরিবেশ প্রেমীরা রীতিমত উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি দিন চারেক পরেও ওই মৃত শুশুকের দেহ পুর কর্তৃপক্ষ সরানোর ব্যবস্থা না করায় দূষণ ছড়ানোর অভিযোগও ওঠে।
মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক শুভময় দাশ বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই শুশুক নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইদানীং প্রায়ই মৃত শুশুকের দেখা মিলছে। সম্প্রতি গেঁওখালি থেকে একটি শুশুকের দেহ উদ্ধার হয়।’’ তিনি জানান, যে অবস্থায় শুশুকটি দেখা যায়, ততে মনে হয়েছে তার দেহ থেকে মাংস কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু ছোট শুশুকও মারা পড়ছে, যা উদ্বেগের বিষয়।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, মূলকত বর্ষায় এদের বেশি দেখা যায়। হলদিয়া, কুকড়াহাটি, গেঁওখালি, নুরপুর প্রভৃতি এলাকায় নদীতে বিভিন্ন পকেটে এদের দেখা যায়। তবে ইদানীং অনেক বেশি চোখে পড়ছে ওরা।
যে সব কারণে শুশুকের দল মারা পড়ছে
• জলে লবণের পরিমান বেড়ে যাওয়া
• পছন্দের খাদ্য না পাওয়া
• জাহাজ বা ট্রলার চলাচলের পথে চলে আসা।
শুভময়বাবু বলেন, ‘‘কলেজে গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকটি কারণে জন্য এই শুশুকের দল মারা পড়ছে। জলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, পছন্দের খাবার না পাওয়া ও সর্বোপরি বার বার জাহাজ বা ট্রলার চলাচলের পথে চলে আসাই এর কারণ। জাহাজের প্রপেলারে কাটা পড়ে হয় জখম হচ্ছে নয়তো মারা পড়ছে প্রাণীগুলি।
হলদিয়ার কুকড়াহাটি এলাকার এক মৎস্যজীবী জানান, এই ডলফিনরা জেলে নৌকার পাশে ঘোরা ফেরা করে মাছ খাওয়ার লোভে। অনেক সময় জালে জড়িয়ে মৃত্যু হয়। সংখ্যায় একাধিক ডলফিন থাকলে জাল ছিঁড়ে দিতে পারে। সেই আশঙ্কায় অনেকেই ডলফিন দেখে লগির ঘায়ে মাথা ফাটিয়ে দেন।
কী ধরনের শুশুক বা ডলফিন দেখা যাচ্ছে?
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান, হলদিয়ার এই অঞ্চলে মূলত গাঙ্গেয় ডলফিন দেখা যায়। লম্বায় প্রায় ৬ ফুট। ওজন প্রায় এক কুইন্টালের কাছাকাছি হয়। মাছখেকো এই প্রাণীর ৪০টি দাঁত থাকে। এদের চোখ কার্যত থাকে না। তাই এদের ব্লাইন্ড ডলফিনও বলে। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সের প্রাক্তন অধ্যাপক অমলেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘হলদিয়ার আশপাশের নদীতে যে সব ডলফিন পাওয়া যায় সেগুলি গাঙ্গেয় ডলফিন। এদের বেশিরভাগই জালে আটকা পড়ায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।’’ তিনি জানান, নবদ্বীপের কাছে বালাগড়ের উত্তরে সবুজ দ্বীপ-সহ বেশ কিছু জায়গায় ইরাবতী ডলফিন ও গাঙ্গেয় ডলফিন দেখা যায়। তিন বছর হল এই ডলফিন শুমারি শুরু হয়েছে। শুমারি শেষ হলে ডলফিনের সংখ্যার প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।