সৃষ্টি: কপিল মুনির অভিশাপে ভস্মীভূত হয়ে যাচ্ছেন সগররাজার সন্তানেরা। গঙ্গাসাগরে সেই দৃশ্য দেখাচ্ছে দেওয়াল-চিত্র। নিজস্ব চিত্র
আসমুদ্রহিমাচল ভারতভূমির কাছে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম মুখ হিসেবে উঠে আসছে গঙ্গাসাগর মেলা। পৌষসংক্রান্তির পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করে সাগরমেলা কার্যত হয়ে ওঠে মিনি ভারত। এটা মাথায় রেখেই সাগরদ্বীপে এ বার পরিবেশ রক্ষা আর সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে পুরাণকথা ও লোকগাথার পরম্পরা তুলে ধরছে রাজ্য সরকার।
এ বার সাগরমেলায় কপিল মুনির আশ্রম বা সমুদ্রসৈকতে গেলেই এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতার ছোঁয়া পাবেন পুণ্যার্থীরা। এই তিনের সমন্বয়ে অনুভব করা যাবে একটা পরিবর্তনের স্পর্শও। মেলার দিনগুলিতে সমুদ্রসৈকতে ২৪ ঘণ্টাই এক ধরনের ‘ই-কার’ বা বৈদ্যুতিন গাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করবে। স্থানীয় চালকদের সাহায্যে ৪০টি ই-কার মোতায়েন করা হবে বলে জানান দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। তিনি বলেন, ‘‘গোটা দেশের মানুষ যেখানে আসছেন, সেই জায়গাটা বাসযোগ্য করে তোলা ও পরিচ্ছন্ন রাখা একটা জরুরি দায়। সেটা মাথায় রেখেই নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ এই পরিচ্ছন্নতা-প্রয়াসের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে পরিবেশ রক্ষার জরুরি বিষয়টিও। একই ভাবে ওতপ্রোত হয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্যায়ন আর পুরাকথার উল্লেখ। এ ক্ষেত্রে সাগরদ্বীপের সাংস্কৃতিক পরম্পরা মেলে ধরার উপরে জোর দিচ্ছেন জেলাশাসক। সেই জন্যই কপিল মুনির আশ্রমে পরপর ১২টি ম্যুরাল বা দেওয়াল-চিত্রে উপস্থাপিত হচ্ছে সাগরদ্বীপের পৌরাণিক মাহাত্ম্য। একযোগে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে এবং
কয়েকটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়
রক্ষা করেই গঙ্গাসাগর মেলার পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
সমুদ্রসৈকত পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্মল বাংলা মিশন। আশ্রমের লাগোয়া তল্লাটে পুজোর ডালা কেনার সময় প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যাগ সরবরাহের চেষ্টা চলছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জোট বেঁধে। গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ (জিবিডিএ)-এর উদ্যোগে নগরোন্নয়ন দফতরের গ্রিন সিটি মিশনে এক কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা খরচ করে মেলার মাঠে (প্রায় ১০ একর) বিভিন্ন রাস্তায় কেরলের ধাঁচের নারকেল গাছ লাগানো হয়েছে। ৪৫ লক্ষ টাকায় গ্রিন সিটি মিশনেই তৈরি হয়েছে ২০০টি স্থায়ী আধুনিক শৌচাগার। এ বারের মেলায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন পুণ্যার্থীরা।
কপিল মুনির আশ্রম-চত্বরে পুরাণকথা তুলে ধরার কাজটাও করছে জিবিডিএ। গ্লাস ইমপোজড ফাইবারে প্রাচীরচিত্রের প্যানেল ১২ বছরে রোদ-ঝড়-জলে নষ্ট হবে না বলে জানালেন জিবিডিএ-র কার্যনির্বাহী আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল। লেজ়ার-প্রযুক্তিতে প্রাকারচিত্রগুলির রং বদলানোর ব্যবস্থা হয়েছে। কপিল মুনির অভিশাপে সগররাজার সন্তানদের ভস্মীভূত হওয়া থেকে ভগীরথের গঙ্গা আবাহন— সবই দেখা যাবে ওই দেওয়াল-চিত্রে। থাকছে শিবের জটা থেকে গঙ্গাবতরণও। ফোয়ারার মতো জল ঝরলেও তাতে মূর্তিচিত্রের ক্ষতি হবে না। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘মেলা চলাকালীন সন্ধ্যায় মূর্তি ও ম্যুরালে রং বদলের খেলা চলবে আলোয় আলোয়।’’
পুণ্যার্থীদের জন্য গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে আশ্রম ও নাটমন্দির তল্লাট। বিষ্ণুপুরাণে বর্ণিত বিষ্ণুর অবতার কপিল মুনির পুরো কাহিনি বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা থাকছে আশ্রম-প্রাঙ্গণে।
সাগরমেলাকে কুম্ভমেলার মতো করে গড়ে তুলতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা মাথায় রেখেই চলছে সংস্কার পর্ব।