শব্দবাজির উৎপাদন বন্ধে নজর মন্ত্রীর

পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘মূল উৎপাদনে ধাক্কা না দিলে শব্দবাজির দাপট ঠেকানো যাবে না, তা জলের মতো পরিষ্কার। কী ভাবে সেটা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। কাজটা কঠিন হলেও তা করে দেখাব।’’ 

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২০
Share:

পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।—ফাইল চিত্র।

প্লাস্টিকের মতো শব্দবাজির ক্ষেত্রেও সমস্যাটা এক। তাই উৎসে ঘা না দিয়ে স্রেফ উপর থেকে বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়ে যে লাভ হবে না, এত দিনে তা মানল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার পরিবেশমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ নিয়ে দফতরের কর্তাদের এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, শব্দবাজির উৎপাদন বন্ধ করা এ বার প্রধান লক্ষ্য। কী ভাবে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দ্রুত এই কাজ শুরু করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে বলে দফতর সূত্রে খবর।

Advertisement

পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘মূল উৎপাদনে ধাক্কা না দিলে শব্দবাজির দাপট ঠেকানো যাবে না, তা জলের মতো পরিষ্কার। কী ভাবে সেটা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। কাজটা কঠিন হলেও তা করে দেখাব।’’

এক পরিবেশ কর্মীর কথায়, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা পুলিশ যখন আসরে নামে, তার অনেক আগেই শব্দবাজি বাজারে চলে আসে। বিক্রিও হয়ে যায়। এটা কি সরকার জানে না?’’ সৌমেনবাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এ বার বাজি কারখানায় নজর দিয়েছিলাম। নিষিদ্ধ বাজি বাতিলও করেছিলাম। তার পরেও কলকাতায় শব্দবাজি ফেটেছে। নজরদারির ফাঁকগুলো খুঁজে বার করে কারখানা বা যে সমস্ত জায়গায় বাজি তৈরি হয়, সেখানে আরও নজর দেব। পরের পুজো পর্যন্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত সেই কাজ শুরু হবে।’’ দ্রুত বলতে? এক মাস? দুমাস? শব্দবাজি বন্ধে আইন আনা হবে? সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘দু'সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব। উনি যদি মনে করেন, প্রয়োজনে আইন আনার কথাও ভাবা হবে।’’

Advertisement

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, পর্ষদের অনুমোদিত বাজি কারখানার সংখ্যা ছিল ৪৮টি। শব্দবিধি না মানায় চলতি বছরে ২৩টি কারখানার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘কারখানার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা অপেক্ষাকৃত সোজা। কিন্তু ঘরে-ঘরে যেখানে বাজি তৈরি হচ্ছে, সেখানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার স্পষ্ট দিক-নির্দেশ চাই। কী ভাবে তা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। শব্দবাজির লবি এতটাই শক্তিশালী যে দফতরের ভিতর থেকেও প্রতিরোধ আসতে পারে। প্রয়োজনে ছোট ছোট দল তৈরি হবে। অন্য জায়গা থেকে কর্মী নেওয়ার প্রয়োজন হলে, তা করা হবে।’’

যদিও পরিবেশকর্মীদের বড় অংশের অভিযোগ, অনুমোদনহীন কারখানা কয়েক হাজার। এত দুর্ঘটনা, মৃত্যুর পরও প্রশাসনের একাংশের ‘যোগসাজসে’ এগুলো চলছে। এখন রাতারাতি তা বন্ধ করা যাবে কী ভাবে? তাঁদের মতে, চেষ্টা করলে যে উৎপাদন ঠেকানো যায় তা এ বার অনেকটাই দেখিয়ে দিয়েছে দিল্লি। ‘সদিচ্ছার অভাবে’ পশ্চিমবঙ্গ তা পারেনি। রাতারাতি সেই সদিচ্ছা তৈরি হবে তো? পরিবেশ দফতরের কর্তারা অবশ্য বলছেন, শব্দবাজি বন্ধে দিল্লির সাফল্য আর কলকাতার না-পারা এ বার এত প্রকট যে ঘুরে না দাঁড়িয়ে প্রশাসনের উপায় নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement