প্রতীকী ছবি।
সেতুভঙ্গে শাস্তি বিনা গতি নেই।
পূর্ত দফতরের তরফে ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশে এমনই ফরমান জারি করা হল। দফতরের ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ তৃণমূল স্তরের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারদের লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ছোট বা বড় যে কোনও ধরনের সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যদি তার পরেও কোনও অঘটন ঘটে, তা হলে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের উপরই তার দায় বর্তাবে। নবান্ন থেকে এমন ফরমান পেয়ে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলেও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যে এখন প্রায় ১৬০০ ছোট-বড় সেতুর এক তৃতীয়াংশের কোনও না কোনও মেরামতি দরকার। তা জোগানোর তহবিল আদৌ আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছে পূর্ত দফতরের একাংশ।
পূর্ত দফতরের খবর, দিন দুই আগে ইঞ্জিনিয়ারদের সর্বোচ্চ কর্তা লিখিত ভাবে সমস্ত জ়োনে জানান, মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে রাজ্য সরকার সেতু-স্বাস্থ্য নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। ছ’টি বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগ করে রাজ্যের সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। পরিদর্শনের কাজ শেষ। পূর্ত মন্ত্রী এবং পূর্ত সচিব অনেকগুলি বৈঠক করে এ নিয়ে সতর্ক
করেছেন। এখন পরির্দশন রিপোর্ট অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার থেকে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারদের মাঠে নেমে সেতু সারাইয়ের কাজ করতে হবে। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে বিপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই জোরালো। জ়োনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ারদের সেতু সারাই সংক্রান্ত নথি ‘লাল মার্কা’ ফাইলে পাঠাতে হবে। যাতে কোনও ভাবেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অর্থ মঞ্জুরিতে দেরি না হয়। এর পরেও সেতুর কিছু হলে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৮ জুলাই জলপাইগুড়ির বাগড়াকোটের কাছে জুরান্তি সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে। একটি লরি সেতুর ভাঙা অংশে ঢুকে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় দু’জনের প্রাণহানি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেতু ভাঙার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট চেয়েছেন। কেন সেতু ভাঙল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের ভূমিকা সে ক্ষেত্রে কী ছিল, তা-ও জানাতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ পূর্তসচিব নবীন প্রকাশকে ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বললেও তদন্ত এখনও চলছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পূর্ত দফতর জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মাঝেরহাট এবং পোস্তা বিবেকানন্দ সেতুর ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রেও দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন। ২০১৬ সালে পোস্তা বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়েছিল। ২০১৮ সালে মাঝেরহাট সেতু ভাঙে।