প্রশান্ত কিশোর। ফাইল চিত্র
জেলা স্তরে তৃণমূলের ভোট-প্রস্তুতির কাঠামো গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করলেন ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর। শুক্রবার দুপুরে কালীঘাটে অভিষেকের অফিসে ঘন্টা আড়াই এই বৈঠক হয়। সেখানে দলের দুই শীর্ষনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী ছাড়াও ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতিরা। উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে প্রশান্তের আশ্বাস, তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি বদল করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। এবং তার জন্য এক বছরের বেশি সময় রয়েছে তৃণমূলের হাতে।
বৈঠকে দলের চালু কাঠামো ভেঙে বুথ স্তর থেকে তথ্য পেতে বিধানসভা কেন্দ্র পিছু ১৫ জন ‘উপযুক্ত’ কর্মী বাছাই করতে বলেছেন প্রশান্ত। সেই সঙ্গে দলের বিধায়কদের নিজের কেন্দ্রে মাসে কমপক্ষে সাত-আটদিন কাটানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। একই পরামর্শ দলের মন্ত্রীদের জন্যেও। প্রশান্তের পরামর্শ, তাঁরা যেন স্থানীয় স্তরে দলীয় বৃত্তের বাইরে থাকা অরাজনৈতিক বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। বিভিন্ন কাজে তাঁদের মত নেওয়ার চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে জেলা সভাপতিদের। বৃহস্পতিবার দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে সংগঠন ও জনসংযোগ নিয়ে দলের ভাবনা স্পষ্ট করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তার নির্দিষ্ট রূপরেখা নিয়ে দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন প্রশান্ত।
প্রাথমিক পরিচয়পর্বেই প্রশান্ত জানান, তিনি তৃণমূলের কোনও নেতা-কর্মীকে নির্দেশ দিতে পারেন না। সেটা দলের এক্তিয়ার। তাঁর কাজ পরামর্শ দেওয়া। এ জন্য তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কোনও আর্থিক লেনদেন নেই বলে প্রশান্তর দাবি। এর আগে মমতাও জানিয়েছেন, বড় বড় সংস্থা যেমন সামাজিক দায়িত্ব ( সিএসআর) পালনের ক্ষেত্রে কাজ করে, প্রশান্তের সংস্থাও তেমনই তৃণমূলের জন্য কাজ করতে পারে।
বুথ স্তর থেকে জনমত যাচাইয়ের কাজে ১৫ জনকে বেছে নেওয়ার কথা বলে প্রশান্তের সুপারিশ, দলের এই ১৫ জনের মধ্যে সব অংশের প্রতিনিধি রাখা দরকার। তৃণমূলের এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘এই ১৫ জন দলের প্রয়োজন মতো তথ্য সংগ্রহ করে জেলা নেতৃত্বকে জানাবেন। প্রশান্তের যে টিম কাজ করবে, প্রয়োজনে তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে তাঁদের।’’ শুধু হারের কারণই নয়, কোথায় দলের ফল কেন ভাল, সে সম্পর্কেও তথ্য চাইছেন প্রশান্ত।
বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের বিরোধীদলগুলির জন্য রাজনৈতিক পরিসর ছাড়ার কথাও বলেছেন প্রশান্ত। অন্য এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘বিরোধীদের জায়গা দিলে তাঁদের শক্তি বোঝা যাবে। একই সঙ্গে বিরোধী ভোট ভাগের সম্ভাবনাও তৈরি করা যাবে। সম্ভবত সে কারণেই দল এটা চাইছে।’’ এই বৈঠকে জেলা নেতাদের রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা কখনই শাসকদলের পক্ষে যায় না। শাসকদল ও প্রশাসন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘দলের নেতাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে মূলত তাঁদের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ তৈরি করেছেন প্রশান্ত। এ মাসের শেষে আরও একটি বৈঠকের কথা রয়েছে।’’