প্রতীকী ছবি।
নির্বাচন বিধি অনুযায়ী বিকেল পাঁচটার মধ্যে যাঁরা ভোট দেওয়ার লাইনে দাঁড়াবেন, তাঁদের ভোট সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই প্রথম বিকেল পাঁচটাতেই সাধারণ ভোটাদের ভোটদান বন্ধ করে দিতে হবে বলে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে। কারণ, পাঁচটা থেকে ছ’টা করোনা আক্রান্ত ভোটারদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে।
কমিশনের এই নির্দেশে আতান্তরে পড়েছেন ভোটের কাজে নিযুক্ত প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের যুক্তি, মানুষকে তো জোর করা যাবে না। প্রশ্ন উঠেছে, পাঁচটার একটু আগে ভোট দিতে আসা ভোটারদের কী হবে? তাঁরা তো পাঁচটার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। ফলে, তাঁদের অধিকার খর্ব করা যাবে না।
এ দিকে সাধারণদের ভোট প্রক্রিয়া পাঁচটায় শেষ করে ভোট কেন্দ্র নতুন করে স্যানিটাইজ় করে, পরবর্তী এক ঘণ্টা করোনা আক্রান্তদের ভোট নিতে হবে। কর্তাদের প্রশ্ন, যে সাধারণ ভোটারেরা লাইনে দাঁড়াবেন, তাঁরা কি তবে পাঁচটার পরে ভোট দিতে পারবেন না? অভিযোগ, এই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও এ বার করোনার জন্য একেকটি ভোট দিতে সময় লাগবে তুলনায় বেশি। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত এক ঘণ্টায় একশোর কাছাকাছি ভোট পড়ে। কিন্তু এ বার প্রথমে ভোটারের তাপমাত্রা মাপা হবে। এর পর হাতের গ্লাভস দেওয়া হবে। ভোটার সেই গ্লাভস পরার আগে, তাঁর হাতে কালি লাগানো হবে। গ্লাভস পরার পরে শুরু হবে মূল ভোট প্রক্রিয়া। কমিশন জানিয়েছে, ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার পরে গ্লাভস খুলে তা নিদিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে ভোটারকেই। এর ফলে একেকটি ভোটের সময় বাড়বে। ফলে, এক নির্দিষ্ট সময়ে ভোটারেরা এসে ভিড় করলে তখন বিশাল লাইন পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই সকালের দিকে এবং বিকেলের দিকে ভোটারেরা ভোট দিতে আসেন। গরমের মধ্যে দুপুরটা ফাঁকাই থাকে ভোটকেন্দ্র। কিন্তু, এ বারে বিকেলের দিকে একসঙ্গে বেশি ভোটার চলে এলে সমস্যায় পড়বে প্রশাসন। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলাশাসকের কথায়, ‘‘বিধি অনুযায়ী বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ ভোটারদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও সুনিদিষ্ট নির্দেশ জারি করা হয়নি।’’
এ বার ভোটকর্মীদের ভোর সাড় পাঁচটায় ‘মকপোল’ (রাজনৈতিক দলের সব এজেন্টের সামনে ইভিএম মেশিন পরীক্ষার ব্যবস্থা) শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে, সাড়ে পাঁচটা থেকেই ভোটকর্মী ও এজেন্টদের হাজির হতে হবে। অতীতে ভোর ছ’টায় ‘মকপোল’ করা হত। কিন্তু, নির্দেশিকায় ‘মকপোল’ বিধি ছাড়া আরও কোনও বিধির পরিবর্তন করা হয়নি। সাধারণের ভোট কখন শেষ হবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েই গিয়েছে। তা নিয়ে কমিশনের তরফে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কলকাতা লাগোয়া এক জেলাশাসক বলেন, ‘‘ধোঁয়াশা আছে। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন।’’
করোনার জন্য এ বার রাজ্যে ৩০ শতাংশ বুথ বেড়েছে। ৩০ শতাংশ ভোট কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট বুথের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। প্রায় চার লক্ষ ভোট কর্মীর প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ২৫ শতাংশ মহিলা বুথও বেড়েছে। ফলে মহিলা পরিচালিত বুথের জন্য প্রায় ১ লক্ষ মহিলা ভোটকর্মীর প্রয়োজন। করোনা সংক্রমণ রুখতে প্রতি বুথে একজন স্বাস্থ্যকর্মী রাখারও কথা বলা হয়েছে। সেখানে আশাকর্মী অথবা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়োগ করার কথা। করোনা আবহে অনেকেই নানা অজুহাতে নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই বিষয়টিও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন এক জেলাশাসক।