ছবি পিটিআই।
ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসন এবং পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে কঠোর পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েই শুধু ক্ষান্ত থাকল না ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখা। কী করলে সেই পদক্ষেপ ‘কঠোর’ বলে বিবেচিত হবে তার রূপরেখাও তৈরি করে দেওয়া হল।পুজো যে হচ্ছে প্রশাসনিক স্তরে সেই বার্তা পাওয়ার পরে গত এক মাস ধরে সরকারের নানা স্তরে উৎসবকে ঘিরে উন্মাদনায় রাশ টানার আর্জি জানাচ্ছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম, অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম-সহ একাধিক চিকিৎসক সংগঠন।
কিন্তু প্রতি বছরের মতো এ বারও যে ভাবে মণ্ডপ দর্শনের ঢাকে কাঠি পড়েছে তাতে কোভিড দর্শন এখন সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পুজোর এক সপ্তাহ আগে আক্রান্তের মাপকাঠিতে রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড তৈরির ধারা অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা হল ৩৭২০। যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬২ জনের। স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, রাজ্য জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এক পদস্থ কর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
গত আট মাস ধরে করোনা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কলকাতা পুরসভার চার জন পদস্থ আধিকারিক পুজোর মুখেই সংক্রমণের ঘেরাটোপে চলে এসেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি শুধু হচ্ছে না। এত দিন যাঁরা কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে সামনের সারিতে ছিলেন তাঁদের অনেকে এখন ভাইরাসের ঘায়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিকাঠামোর পাশাপাশি কোভিডের সঙ্গে যুক্ত সৈন্যদলের যাতে অভাব না ঘটে, তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা, উদ্বেগ
আরও পড়ুন: মণীশ খুনের তদন্তে বিহারে গেল সিআইডি
এই পরিস্থিতিতে উপসর্গহীন ভাইরাসের বাহকদের মাধ্যমে যাতে ব্যাপক মাত্রায় সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং পুজো উদ্যোক্তাদের আঠারো দফা সতর্কবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএ। সেই পরামর্শের একেবারে শুরুতেই জরিমানা ছাড়া যে মাস্কের যথাযথ ব্যবহার সম্ভব নয়, তা কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সে জন্য পুজো প্রাঙ্গণের একশো মিটারের মধ্যে কোনও মাস্কহীন দর্শনার্থী প্রবেশ করলে একশো টাকা জরিমানা করার কথা বলেছে আইএমএ।
আইএমএ-র আর্জি তৃতীয়া থেকে একাদশী দুপুর ২টো থেকে পরদিন ভোর ৪টে পর্যন্ত দু’টি জেলার মধ্যে যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হোক। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার আট মাস পরেও বঙ্গে প্রতিদিনের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা চল্লিশ হাজারের ঘরে আটকে রয়েছে দেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা প্রায়ই বলছেন, ‘কিমাশ্চর্যম’! প্রতিদিনের পরীক্ষা-সূচকে পতন আটকাতে চিকিৎসক সংগঠনের বক্তব্য, উৎসবের মরসুমে পরীক্ষার হার যেন কোনও ভাবেই ব্যাহত না হয়।
পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতি চিকিৎসক সংগঠনের বক্তব্য, স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পাশাপাশি নিজেদের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। পুজোর পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাসিন্দাদের পরীক্ষা করানোর জন্য পুজো কমিটিগুলি যেন এগিয়ে আসে। আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেনের কথায়, ‘‘আমরা আশঙ্কা করছি, পুজোর সময় অনেক মানুষ বেরোবেন। তার ফলে উপসর্গহীনদের সংস্পর্শে এসে অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। উপসর্গহীনদের চিহ্নিত করতে নিজেদের এলাকায় পুজো কমিটিগুলি করোনা পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করলে বিপদ অনেক কমবে।’’ আইএমএ-র ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। যুগ্ম সম্পাদক রাজ্যের কোভিড প্রোটোকল প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত আরজিকরের মেডিক্যালের প্রফেসর জ্যোতির্ময় পাল। সেই চিকিৎসক সংগঠনের তরফে সংক্রমণ রোধে আঠারো দফা ‘পরামর্শ’ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
চিকিৎসক সংগঠনের পরামর্শের প্রেক্ষিতে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক ও হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকায় উল্লেখিত সুরক্ষাবিধি সব পুজো মেনে চলবে। স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক ছাড়া মন্ডপে ঢুকতে দেওয়া হবে না। থার্মাল চেকিং হবে। একসঙ্গে মণ্ডপের ভিতরে ২০-২৫ জনের বেশি দর্শক থাকতে দেওয়া হবে না। সিঙ্গল লাইন করে মণ্ডপে ঢুকতে হবে। মণ্ডপের কাছে খাবার দোকান থাকবে না। দূরে যে দোকানগুলি থাকবে সেগুলিতেও বসার ব্যবস্থা থাকবে না।’’