Mamata Banerjee

হলদিয়ায় শুভেন্দুর কুশপুতুলে আগুন, নন্দীগ্রামে পোস্টারে জুতোর মালা

শনিবার বিকেলে হলদিয়ার বাসুদেবপুরে শুভেন্দুর ভাই তথা স্থানীয় সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর দফতর ‘সতীশ সামন্ত সাংসদ ভবন’ দখল করেন তৃণমূল কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৩০
Share:

হলদিয়ায় পোড়ানো হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারীর কুশপুতুল— নিজস্ব চিত্র।

শনিবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় তিনি বিজেপি-তে যোগ দিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ‘তৎপরতা’ শুরু করলেন তাঁর প্রাক্তন দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। হলদিয়ায় শুভেন্দুর ফ্লেক্স-ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়া হল। দাহ করা হল কুশপুতুল। অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে ‘দাদার’ ছবিতে ঝুলল জুতোর মালা।

Advertisement

তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ওই দুই বিধানসভায় এতদিন শুভেন্দুর প্রভাব ছিল প্রবল। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে দু’টি এলাকা থেকেই বহু ভোটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পিছনে ফেলে সাংসদ হয়েছিলেন শুভেন্দু। অন্যদিকে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে ৬৭ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ বাম প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের পার্থক্য ছিল ৮১ হাজার। নন্দীগ্রামেই ২০০৭ সালের জমি রক্ষা আন্দোলন থেকে তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের শুরু।

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ শনিবার শুভেন্দুর দলবদলকে সরাসরি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেই চিহ্নিত করেছেন। হলদিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুড়খালিতে কিছু তৃণমূল সমর্থক শুভেন্দুর কুশপুতুলে আগুন লাগান বলে জানা গিয়েছে। এর পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডেই হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের বাড়ি। তাপসী এ দিন মেদিনীপুরে গিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

ওই ওয়ার্ডের বিক্ষোভরত তৃণমূল কর্মী শেখ আকবর আলি বলেন, ‘‘শুভেন্দু বিশ্বাসঘাতক। উনি হলদিয়ার প্রতিটি কারখানার গেটে দুষ্কৃতী বাহিনী মোতায়েন করে রেখেছিলেন। তোলাবাজিতে মদত দিয়েছেন। নিজের স্বার্থ পূরণ করতে সব সময় কাজ করেছেন।’’

আরেক তৃণমূল কর্মী মইদুল ইসলাম খানের মন্তব্য, ‘‘২০০৬ সাল থেকে শুভেন্দুর নেতৃত্বে আমরা তৃণমূল করেছি। কিন্তু উনি এখন তৃণমূলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মানুষ বুঝে গেল, গত লোকসভা নির্বাচনে শুভেন্দুর অন্তর্ঘাতের ফলেই বিজেপি এই রাজ্যে এতগুলি আসন জিততে পেরেছে। মেদিনীপুরের মানুষ শুভেন্দুকে ক্ষমা করবে না। উনি একজন বড় নেতা, সম্মাননীয় মন্ত্রী ছিলেন। শুধু নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তাই আজ শুভেন্দুর কুশপুতুল পোড়ান হচ্ছে হলদিয়ার বিভিন্ন জায়গায়।’’

শনিবার বিকেলে হলদিয়ার দুর্গাচকের বাসুদেবপুরে শুভেন্দুর ভাই তথা স্থানীয় সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর দফতর ‘সতীশ সামন্ত সাংসদ ভবন’ দখল নেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। এই ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবর পেয়ে দুর্গাচক থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

হলদিয়ায় শুভেন্দু অনুগামী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আগামী দিনেও আমরা দাদার অনুগামীই থাকব। গত কয়েকদিন ধরে তাঁরা হলদিয়া জুড়ে শুভেন্দুর যে সমস্ত পোস্টার-ব্যানার লাগিয়েছিলাম, সেগুলি আজ ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ এই ঘটনায় তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুভেন্দুর তরফে তাঁদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি জানিয়ে মানস বলেন, ‘‘দাদার নির্দেশ পেলেই আমরা ঘর গোছানোর কাজে নেমে পড়ব।’’

আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে ফের নন্দীগ্রামেই ভোটে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের

অন্য দিকে, বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের হাজরাকাটায় শুভেন্দুর ফ্লেক্সে জুতোর মালা ঝোলানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

তবে এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ ‘দাদার অনুগামী’রা। তাঁদের দাবি, নেতা জেলায় সক্রিয়তা শুরু করলেই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। দাদার ঘনিষ্ঠ কাঁথির নেতা কণিষ্ক পণ্ডা বলেন, ‘‘আগামিকাল থেকেই নিজের কাজে নেমে পড়বেন শুভেন্দু। গোটা জেলা জুড়েই এ বার গেরুয়া ঝড় উঠবে।’’

আরও পড়ুন: নতুন বছরের গোড়ায় শুভেন্দুর ‘গড়’ নন্দীগ্রামে যেতে পারেন মমতা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement