সোম থেকে শনি পাড়ায় পড়াশোনা চলবে। ফাইল চিত্র।
এক দিকে প্রকল্প রূপায়ণ ঘিরে নানা প্রশ্ন, সংশয়, বিতর্ক ও দুর্ভাবনা। অন্য দিকে ঘোষণা অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ চালু করতে শিক্ষা প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ-আয়োজনের পাশাপাশি আসছে নানান নির্দেশ। রাজ্য সরকারের নির্দেশ: সপ্তাহের ছ’দিন অর্থাৎ সোম থেকে শনি পাড়ায় পড়াশোনা চলবে। রোজ ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে হবে দুই অর্ধে। প্রতি অর্ধ দু’ঘণ্টার। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা এবং বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টে। প্রতি অর্ধে শিক্ষার্থী বদল হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলাবে না। ক্লাসের শুরুতে স্কুলের মতো প্রার্থনা হবে। টিফিনেরও সুযোগ দিতে হবে পড়ুয়াদের।
সরকারি নির্দেশিকায় এই সমস্ত নিয়মের সঙ্গেই বলা হয়েছে, কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে কোন পাড়ার শিক্ষালয়ে পাঠাতে হবে এবং কী কী প্রস্তুতি-সহ পাঠাতে হবে, সেটা সব অভিভাবককে জানিয়ে দিতে হবে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। বিভিন্ন জেলার শিক্ষা দফতরের কর্তারা সম্প্রতি ভিডিয়ো সম্মেলনের মাধ্যমে এমনই একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ওই স্কুল-প্রধানদের একাংশ জানান: সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রথম অর্ধে এক দল ছাত্রছাত্রীকে দু’ঘণ্টা পড়ানোর পরে এক ঘণ্টার বিরতি। বেলা দেড়টা থেকে দ্বিতীয় অর্ধে পড়বে অন্য এক দল ছেলেমেয়ে।
শিক্ষা শিবিরের খবর, পড়ুয়ারা দু’ভাগে এলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থাকতে হবে সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টে পর্যন্ত। কলকাতার একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “আমাদের স্কুলে অনেক দূর থেকে পড়ুয়ারা পড়তে আসে। এখন তারা অনলাইনে ক্লাস করছে। তারা এ বার পাড়ায় শিক্ষালয়ে পড়তে এলে সেই ক্লাস করতে পারবে না। এর ফলে অনেক পড়ুয়াই উৎসাহ হারাচ্ছে।” অন্য এক শিক্ষকের প্রশ্ন, “পাড়ায় শিক্ষালয় শুরু হলে অনলাইন ক্লাসের কী হবে? সেই ক্লাস কি বন্ধ করে দেওয়া হবে?” জবাব মিলছে না।
নির্দেশ এসেছে, পাড়ার নাম অনুসারে শিক্ষালয়কে চিহ্নিত করে ব্যানার বা ফ্লেক্স বানিয়ে তাতে সেই নাম লিখতে হবে। তার খরচ দিতে হবে স্কুলের ‘কম্পোজিট গ্রান্ট’ থেকে। নির্দেশে বলা হয়েছে: একটি পাড়া থেকে ক’জন ছাত্রছাত্রী পাড়ার শিক্ষালয়ে আসবে, এলাকায় ঘুরে ঘুরে তা ঠিক করতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। কোনও শিক্ষালয়েই ২০ থেকে ২৫ জনের বেশি পড়ুয়া থাকবে না। তাদের বসার জন্য চট বা শতরঞ্চির ব্যবস্থা করতে হবে। সেটি স্যানিটাইজ় বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে রোজ। পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শৌচালয়ের কী বন্দোবস্ত হবে, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। এক শিক্ষাকর্তা জানাচ্ছেন, অস্থায়ী শৌচালয়ের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।
জেলার শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, পাড়ায় শিক্ষালয় নিয়ে ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকদের একাংশের ‘উৎসাহ চোখে পড়ার মতো’। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআই) জানান, অনেক দিন পরে স্কুলের মতো পাঠদান শুরু করার উদ্যোগ দেখে বহু পড়ুয়াই উৎসাহী হয়ে উঠেছে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা অবশ্য বলেন, “পড়ুয়াদের উৎসাহ আছে ঠিকই। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবকের প্রশ্ন, স্কুল না-খুলে এ ভাবে মাঠেঘাটে পড়ানোর যুক্তি কী? পাড়ার মাঠে না-পড়িয়ে অন্তত স্কুলমাঠে বা স্কুলের সামনে খোলা জায়গায় পড়ানো হোক। তাতে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা বজায় থাকবে।”