(বাঁ দিকে) প্রদীপ ভট্টাচার্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
কংগ্রেস থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করার প্রায়শ্চিত্ত এখনও শতাব্দীপ্রাচীন দলকে করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রবীণ কংগ্রেস নেতার সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ বার দুই শব্দে প্রতিক্রিয়া জানালেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা।
মঙ্গলবার দুপুরে গঙ্গাসাগর থেকে হেলিকপ্টারে হাওড়ার ডুমুরজলায় নামেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য নিয়ে। সেই প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঠিক বলেছেন।’’ গত শনিবার প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠান ছিল শিয়ালদহ এলাকায়। সেখানেই ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেস থেকে মমতাকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গের অবতারণা করেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ।
মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রদেশ কংগ্রেসের সোমেন জমানা এবং বাংলায় কংগ্রেসের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে প্রদীপ বলেছিলেন, ‘‘কেন কংগ্রেস দলটা খণ্ডিত হয়ে গেল? আমার মনে আছে, যে দিন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দল থেকে বহিষ্কার করা হল, আমি সে দিন শ্রীরামপুর থেকে ফিরছিলাম। আমি যখন দ্বিতীয় হুগলি সেতুর সামনে, সোমেনের ফোন এল। সীতারাম কেশরী ওঁকে বলেছেন, ‘মমতাকে তোমাদের বহিষ্কার করতে হবে, কারণ আমরাও করেছি।’ আমি বলেছিলাম, এটা কিছুতেই কোরো না। কিন্তু সোমেনের উপরে এমন চাপ তৈরি করা হয়েছিল যে, এটা করতে তিনি বাধ্য হন। তার প্রায়শ্চিত্ত কংগ্রেসকে আজও করতে হচ্ছে। আমি জানি না, এই খাদ থেকে আমরা কখন, কী ভাবে উঠতে পারব।’’
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মমতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। ২২ ডিসেম্বর মমতা নতুন দল তৈরির কথা ঘোষণা করেন। তাঁর হাত ধরে তৃণমূলের আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি। এর পর তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কে নানান ওঠাপড়া এসেছে। ২০০১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে বিধানসভো ভোটে লড়েন মমতা। তবে সেই জোট মূলত খাতায়-কলমে ছিল। ফলিত স্তরে কোনও দাগ কাটতে পারেনি। ভোটের পর জোট ভেঙেও যায়। ২০০৮ সালে কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ সরকারের উপর থেকে সিপিএম সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর মমতা আবার কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলান। এর পর ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১১-র বিধানসভা ভোটে জোট করে লড়ে তৃণমূল এবং কংগ্রেস। রাজ্যে টানা ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান হওয়ার পর মমতার ‘পরিবর্তনের সরকার’ গঠিত হয় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই। তার পর, বছর খানেকের একটু বেশি এই জোট টিকেছিল। পরবর্তীকালে আর কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যস্তরে জোট হয়নি তৃণমূলের।
উল্টোদিকে কংগ্রেস ক্রমশই দুর্বল হয়েছে। বামেদের সঙ্গে জোট করেও বঙ্গ রাজনীতিতে কোমর সোজা করতে পারেনি তারা। তবে মমতা প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসেও ভিন্ন মত রয়েছে। যেমন অধীর চৌধুরীরা কট্টর মমতা-বিরোধী হিসাবেই পরিচিত। প্রদীপের বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেছিলেন, ‘‘প্রদীপদা সিনিয়র নেতা। উনি যা বলেছেন, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। তবে আমরা মমতার অত্যাচার সহ্য করতে করতে রাজনীতি করেছি। ২০১১ সালে যখন সনিয়া গান্ধী বললেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে হবে, তখন আমি ‘না’ বলিনি। সেই ভোটে কংগ্রেস টাকা দিয়ে সাহায্য করল, হেলিকপ্টার দিল। মমতা ক্ষমতায় এলেন। তার পর তাঁর রূপ সবাই দেখতে পেয়েছে। এ বার বুঝুক, কে কার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করছে।’’
তবে মমতার বক্তব্য, প্রদীপ ঠিক বলেছেন।