—প্রতীকী চিত্র।
সব ঠিকঠাক চললে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য শুরু হতে চলেছে অনলাইন প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) পরিষেবা। গত কয়েক বছর ধরে স্কুলশিক্ষকদের জন্য অনলাইনে পিএফ পরিষেবার চালু করতে আলোচনা চালিয়েছিল অর্থ ও শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি বিকাশ ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সংক্রান্ত বিষয়ে অর্থ দফতরের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের কথা অনেক দূর এগিয়েছে। প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। যে কোনও দিন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য চালু হয়ে যেতে পারে পিএফের অনলাইন পরিষেবা। তবে শিক্ষা দফতরের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে হেতু রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেছে, তাই রাজ্যের সর্বস্তরে চালু রয়েছে নির্বাচনী আচরণ বিধি। সেই কারণে আপাতত নতুন এই ঘোষণা স্থগিত রাখছে শিক্ষা দফতর। পঞ্চায়েতের ভোট পর্ব মিটে গেলেই শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য অনলাইন পিএফ পরিষেবা চালুর কথা বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করে দেবে বিকাশ ভবন।
দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যে প্রাথমিক থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীন স্কুলগুলির শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা অনলাইনে পিএফ পরিষেবা চালুর দাবিতে সরব ছিলেন। কারণ অনলাইন পরিষেবা চালু হয়ে গেলে তাঁদের পিএফ অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে না। নতুন এই অনলাইন পরিষেবাটি চালু হলে ‘বাংলার শিক্ষা’ নামে যে পোর্টালটি রয়েছে, তাতে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের নিজস্ব আইডি অনুযায়ী পিএফ অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। ফলে এটিএম কার্ডের মতোই প্রত্যেককে একটি করে পিন নম্বর দেওয়া হবে। সেই পিন নম্বর দিয়ে যে কোনও সময় শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা পোর্টালে লগ ইন করে পিএফ অ্যাকাউন্টের আপডেট জানতে পারবেন। এমনকি পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে যে সমস্ত ঋণ নেওয়া হয় সে বিষয়টিও বহুলাংশে সরল হয়ে যাবে। আবার অবসরের সময়ে পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে যে অসুবিধা হয়, তা পুরোপুরি মিটে যাবে বলেই জানিয়েছে শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের অবসর গ্রহণের পর পিএফের টাকা তুলতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। সেই কারণেই নতুন এই পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি যুক্ত করার কথা ভেবেছে শিক্ষা দফতর।
শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষকেরা সাধারণত অপছন্দের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের পিএফ অ্যাকাউন্ট আপডেট করেন না। এ ক্ষেত্রে অনলাইন পরিষেবা চালু হয়ে গেলে পিএফ অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানশিক্ষকেরা তা আপডেট করতে বাধ্য থাকবেন। ফলে এই পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষকের দ্বন্দ্বের বিষয়টিও মিটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অনলাইন পরিষেবা চালু হলে বদলি সংক্রান্ত বিষয়েও শিক্ষকেরা সুরাহা পাবেন বলে দাবি করছে শিক্ষা দফতরের একাংশ। তাঁদের কথায়, যে সব শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা অন্য স্কুলে বদলি হচ্ছেন বেশি সুবিধা হবে তাঁদের। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষক অন্য স্কুলে বদলি হয়ে গেলেও, পিএফ অ্যাকাউন্ট পুরনো জায়গাতেই থেকে যায়। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী বদলি হলেই নতুন স্কুলে যোগদানের সময় অনলাইনে তাঁর ‘প্রোফাইল ট্রান্সফার’ হয়। এ বার অনলাইন পরিষেবা চালু হলে ‘প্রোফাইল ট্রান্সফারের’ সঙ্গেই পিএফ অ্যাকাউন্টও ‘ট্রান্সফার’ হয়ে যাবে। অনলাইন পরিষেবা চালু করার আগে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে হবে বিকাশ ভবনকে।
সেই পদক্ষেপ অনুযায়ী, একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা ডিরেক্টরেট। তাতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যে সমস্ত জায়গায় ‘অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর’ বা ‘স্কুল ইন্সপেক্টররা’ বদলি হয়ে গেছেন, তাঁদের বদলে নতুন যাঁরা যোগদান করেছেন তাঁদের ‘আইডি আপডেট’ করতে হবে। তাঁদের ‘আইডি আপডেট’ না হলে তাঁরা আগামী দিনে শিক্ষকদের ‘আইডি আপডেট’ করতে পারবেন না।
আগামী দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে স্কুলগুলির শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের পরিষেবা অনলাইনে চালু হলে শিক্ষকদের সমস্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই মিটে যাবে বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সভাপতি বিজন সরকার। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার যে শিক্ষা এবং শিক্ষাকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপ তারই প্রমাণ। আশা করব সময় মতো শিক্ষকদের জন্য অনলাইন পিএফ পরিষেবা চালু করে রাজ্য সরকার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য আগামী দিনের পথ সুগম করবেন।” তবে বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে দাবি করা হয়েছে, দু’বছর আগে তাদের করা দাবি মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। সংগঠনের নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, “গত দু’বছর আগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল আমাদের তরফে। কারণ অনেক শিক্ষকের বদলির সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ পিএফ অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার না করায় সমস্যায় পড়ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। এত দিন পরে সেই দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আমরা আনন্দিত।”